গায়ে তুলেও খুলতে হচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের পোশাক

গায়ে তুলেও খুলতে হচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের পোশাক
ছবি : সংগৃহীত

কাছাকাছি রং হওয়ায় পুলিশের আপত্তির মুখে চার মাস ঝুলে ছিল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইউনিফর্ম। দফায় দফায় মিটিংয়ের পর সেই আপত্তি থেকে সরে আসে পুলিশ। ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের ইউনিফর্ম গায়ে তোলেন ডিএনসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; কিন্তু চার মাসের বেশি ডিএনসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেই পোশাক গায়ে জড়াতে পারেননি। রঙের কারণেই আবার খুলতে হচ্ছে।

হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা গেছে মাদক নিয়ে কাজ করা এ বাহিনীটির মধ্যে। তবে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, পোশাক নিয়ে তাদের আপত্তি নেই; কিন্তু পুলিশের মতো রং হওয়াতেই আপত্তি।

ডিএনসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের প্রথমবারের আপত্তি নিষ্পত্তির পর গত বছরে ডিসেম্বরে পোশাক গায়ে তুলেছিলেন তারা। চার মাস পর আবারও আপত্তি দেওয়ায় এবার রং পরিবর্তন করে নতুন পোশাক পরতে হবে তাদের।

তাদের দাবি, দুই বাহিনীর পোশাকের রং ভিন্ন হওয়ার পরও এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। এই ইউনিফর্ম ফেলে নতুন পোশাক তৈরি করলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা গচ্চা যাবে। সঙ্গে বাড়বে নতুন পোশাকেরও খরচ।

গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক অফিস আদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পোশাকের রং পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়। অবশ্য এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পদস্থ কোনো কর্মকর্তাই এ বিষয়েই কথা বলতে চাননি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নতুন পোশাক পরে মাঠে নামার কথা ছিল ডিএনসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের। তার আগে পোশাক নির্ধারণের বিষয়ে পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করা হয়। সর্বশেষ পোশাক চূড়ান্ত হওয়ার পর ২০২০ সালে নভেম্বর ভেটিংয়ের জন্য কাপড় পাঠানো হয় সব দপ্তরে; কিন্তু কোনো সংস্থাই সে সময় আপত্তি দেয়নি। যার ওপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের ২৩ মে ডিএনসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের পোশাক নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে পোশাক পরার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও দিয়েছিল অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী ১ হাজার ২৪৫ জন সদস্যের কাছে পোশাক পৌঁছানো হয় গত ২৬ আগস্ট। নতুন পোশাক পেয়ে অনেকে সেদিন পোশাক পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি আপলোড করেন, যা চোখে পড়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশসন কমিটির।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, সেটি দেখার একদিন পর ২৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন তারা। মৌখিক সেই আপত্তির ফলে সাময়িকভাবে নতুন এই পোশাক পরা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে তাদের। পরে আবার কথা বলে নির্দেশনা দেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বর থেকে পোশাক পরা শুরু করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সে সময় জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশসনের সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নতুন পোশাকটি দেখার পর পরই আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনি। কেননা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বাহিনীর পোশাক কাছাকাছি হলে মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হবে।’

এর আগে ২০১৪ সাল থেকে প্রজ্ঞাপন অনুসারে অধিদপ্তরের সিপাহি থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাঁকি রঙের পোশাক পরতেন। তবে সেই পোশাক নিয়ে তাদের অসন্তোষও ছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত পদে বিভাগীয় সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। তবে পরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং মহাপরিচালকরা আসেন বিসিএস অ্যাডমিন ও পুলিশ সার্ভিস থেকে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো তারা অর্থ পাচার এবং মাদকসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার সরাসরি তদন্ত করতে পারে। বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বাহিনী জাতিসংঘের ইউএনওডিসির (ইউনাইটেড ন্যাশনস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম) সদস্য। সব কিছুর পরও তাদের মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘ঢাল-তলোয়ার বিহীন’ বাহিনী করে রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com