প্রতিদিন আমাদের বাসা-বাড়ি থেকে ফেলা হয় নানা ধরনের বর্জ্য। যার অধিকাংশই তরকারি-জাতীয় বর্জ্য। এগুলো সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে এ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পুনর্ব্যহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এবার নতুন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন। তাদের উদ্যোগে নগরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন করতে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা ‘রি-গ্রিন’। চলতি সপ্তাহেই এ কার্যক্রম শুরুর কথা। পরে পর্যায়ক্রমে এ সার বাজারজাতকরণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৩৫টি ট্রাক-ভ্যান ও ৬৮০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাত ধরে ৬০-৬৫ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব বর্জ্য নগরের নাছনিয়ার কলাবড়ির খোলা জায়গায় ফেলা হয়।
সূত্র বলছে, সংগৃহীত মিশ্র বর্জ্য থেকে পচনশীল বর্জ্য আলাদা করে সেগুলো থেকে তৈরি করা হবে সার। এজন্য ওই এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ২১টি প্রকোষ্ঠ, যার প্রতিটির আয়তন প্রায় ২১০ বর্গফুট। এগুলোর ১৫ টন পচনশীল বর্জ্যের ধারণক্ষমতা রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে পচনশীল বর্জ্য থেকে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার তৈরি করার জন্য ২০১৬ সালে রংপুর নগরের নাছনিয়ায় এক একর জমির ওপর এই প্লান্ট গড়ে তোলা হয়। এতে ব্যয় হয় সোয়া ২ কোটি টাকা। শুরুর দিকে একটি বেসরকারি
সংস্থাকে পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির কাজ দেওয়া হলেও তারা পারেনি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটির কাজ। পাঁচ বছর পর গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্প আবার চালু করার উদ্যোগ নেয় রংপুর সিটি করপোরেশন। তখন চুক্তি করা হয় ছিন্নমূল মহিলা সমিতির সঙ্গে। কিন্তু সেই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিটি করপোরেশনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে সার উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করে রি-গ্রিন।
সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান মিজু বলেন, এটাকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখছি। এখন যে সংস্থাটি কাজ করছে, তাদেরকে আমরা মনিটরিং করছি। যদি সফলভাবে সার উৎপাদন সম্ভব হয় তাহলে নগরবাসী উপকৃত হবেন।
সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের সময় একেবারে উৎস থেকে কীভাবে পচনশীল বর্জ্য আলাদা করা যায়, তা নিয়ে আমরা ভাবছি। আশা করা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে জৈব সার উৎপাদনে গতি ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নিয়েছি। যদি সেটাতে সফলতা আসে, তাহলে পচনশীল ময়লা-আবর্জনার ব্যবহার বাড়বে। এতে সারের ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে।