
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে চলতি মাসেই। এ কমিটিতে নেতৃত্ব নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সংগঠন কীভাবে কাজ করবে—এসব প্রশ্ন উঠছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। সম্প্রতি কৃষকের ধান কাটা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তাসহ নানা কার্যক্রমে ছাত্রলীগ যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি নানা ঘটনায় বিতর্কের জন্মও দিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এসব বিষয় নিয়ে দৈনিক কালবেলার মুখোমুখি হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। কথা বলেছেন ছাত্রলীগের নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়া, সংগঠনের কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
দৈনিক কালবেলা: বর্তমানে সাংগঠনিক কোন কোন কাজকে প্রাধান্য দিচ্ছেন?
সাদ্দাম হোসাইন: আমরা এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সে লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে কমিটি থাকবে। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা যেন নৌকার পক্ষে ভোট দেয়, প্রতিটি সিটি করপোরেশন যেন নৌকার পক্ষের নগরীতে পরিণত হয়, সে চেষ্টা করছি। এ ছাড়া যে ভর্তি পরীক্ষাগুলো চলমান, অতীতের মতো আমরা সেসব পরীক্ষায় সৃজনশীল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি।
দৈনিক কালবেলা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে নাগাদ হতে পারে?
সাদ্দাম হোসাইন: কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যেই কমিটি করতে পারব বলে আশা করছি। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে সাংগঠনিক
বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রোড প্ল্যান চূড়ান্ত করব। যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অথবা যেসব নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম যেখানে নেই, সেখানে আমরা সংগঠনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে নিয়ে আসব।
দৈনিক কালবেলা: পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হবে কি না?
সাদ্দাম হোসাইন: সার্বিকভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে হুট করে নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। জীবনবৃত্তান্ত কিংবা লবিং তদবিরের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। কারণ, কেন্দ্রে যারা নেতৃত্বে আসবেন, আমরা মনে করি তারা গোটা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি। যারা ছাত্র সমাজের কাছে পরিচিত, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, আন্দোলন সংগ্রাম, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার মতো সক্ষমতা রয়েছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে। যে কারণে এবার উড়ে এসে জুড়ে বসার কোনো সুযোগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগে থাকছে না।
দৈনিক কালবেলা: প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় একটি অংশ কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পায়। এবার কমিটিতে কোনো বৈচিত্র্যতা থাকছে কি না?
সাদ্দাম হোসাইন: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটিতে অবশ্যই বৈচিত্র্য থাকতে হবে। তৃণমূলকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনা গেলে সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে, প্রাণের সঞ্চার হবে। ছাত্র সংগঠন হিসেবে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাইলে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যারা মহানগর, জেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা অবশ্যই দক্ষ।
দৈনিক কালবেলা: ছাত্রলীগের যেসব সাংগঠনিক ইউনিট মেয়াদ উত্তীর্ণ, সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
সাদ্দাম হোসাইন: কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরপরই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে, সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংগঠনকে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন, তারুণ্যের প্রাণের সঞ্চালনের সংগঠন হিসেবে দেখতে চাই।
দৈনিক কালবেলা: দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা কলেজ ইউনিটের কমিটি নেই, আপনারা এ ইউনিটের কমিটি দিতে পারবেন কি না?
সাদ্দাম হোসাইন: ঢাকা কলেজ আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি ইউনিট। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে।
দৈনিক কালবেলা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চ্যালেঞ্জিং এ নির্বাচনে ছাত্রলীগের পরিকল্পনা কী?
সাদ্দাম হোসাইন: আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সন্ত্রাস মোকাবিলা করা। যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের মোকাবিলা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দেওয়াকে ছাত্র সমাজ দায়িত্ব মনে করে। আমাদের ভাগ্য শেখ হাসিনার নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আমরা যে পরিমাণ বিজয় অর্জন করেছি, জনগণের জীবন মানের যে পরিমাণ উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছি, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষায় ও কর্মসংস্থানের উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে তরুণরা নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আমরা নতুন উন্নত একটি দেশের স্বপ্ন দেখতে যাচ্ছি। আমাদের এ স্বপ্নের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের তরুণরা। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের যে রূপকল্প, সেটি যদি আমরা পূরণ করতে না পারি, তাহলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে, সেই স্বপ্ন থেকে ছিটকে পড়ে যাবে। যে কারণে আমরা যে কোনো মূল্যে দেশরত্ন শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই। নিরঙ্কুশ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পক্ষে রায় আনতে চাই।
দৈনিক কালবেলা: কৃষকের ধান কাটাসহ ছাত্রলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাদ্দাম হোসাইন: এই কার্যক্রমটি আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে পালন করছি। আমরা যে কৃষকের ধান কাটা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, সেটিকে স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখলে চলবে না। এর মাধ্যমে কৃষকের সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম যারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার অথবা দেশের বড় বড় জায়গায় অবদান রাখবে, তাদের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। এক ধরনের মিথস্ক্রিয়তা তৈরি হচ্ছে। তরুণরা কৃষি বিপণনে আগ্রহী হচ্ছে।
দৈনিক কালবেলা: ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। তাদের বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা কী?
সাদ্দাম হোসাইন: নৈতিক অবক্ষয়জনিত কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক কাজে তাদের অংশগ্রহণ থাকছে না। আমরা এ ধরনের কোনো অপরাধকে যে প্রশ্রয় দিচ্ছি না, বহিষ্কারের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ হয়। সংগঠনকে বিতর্কমুক্ত করতে সম্মিলিত একটি সামাজিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা সে লড়াইটি করছি। আমাদের নেতাকর্মীরা যেন উচ্চ নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন হন, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।
দৈনিক কালবেলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
সাদ্দাম হোসাইন: দৈনিক কালবেলাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।