সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে শুরু করেছেন মালিকরা। এখন পর্যন্ত এ বছর বেতন-ভাতা নিয়ে কোথাও কোনো অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। কারখানা মালিক, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা কম। তবে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক নজরদারি রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা। রোজার শুরু থেকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকের বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে—এমন কারখানার বিষয়ে মতামত তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন শেষ হয়নি বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার রপ্তানি ভর্তুকি বা নগদ সহায়তার চতুর্থ কিস্তির ১ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে, যা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় ব্যয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তৈরি পোশাক খাতের প্রধান বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। বিকেএমইএর প্রায় ১ হাজার। বিটিএমএর ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০। বেপজার ৩৬৯টি এবং অন্যান্য বা থার্ডপার্টি কারখানা আছে অন্তত ৫ হাজার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) তথ্যমতে, এসব কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এর ৬৫ ভাগ নারী বলা হলেও সম্প্রতি এই হার ৬০ শতাংশে এসেছে।
শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাচ্ছেন। দেশের কোনো অঞ্চলে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বড় কারখানার মধ্যে ৫০ ভাগ শ্রমিক তাদের মার্চের বেতন পেয়েছে। ছোট ও মাঝারি পর্যায়ে কারখানায় বেতন শুরু হয়েছে, আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি কালবেলাকে বলেন, অধিকাংশ বড় কারখানায় বেতন হয়ে গেছে। ছোট ও মাঝারি পর্যায়ে চলছে। আমাদের দাবি, একজন শ্রমিকও যাতে খালি হাতে ঈদ করতে না হয়। এ বছর ছোট-বড় মিলে শ খানেক কারখানায় সমস্যা হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। বিষয়টি মালিক সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আশা করছি, কোনো অসন্তোষ ছাড়াই শ্রমিকরা তাদের পাওনা পাবে। এটাও সত্য, পাওনা না দিয়ে কেউ পার পাবে না।
এদিকে রোজার শুরুতে বিজিএমইএর সব সদস্যকে চিঠি দিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কারখানায় সমস্যা বা অসন্তোষের আশঙ্কা করা হলে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিজিএমইএকে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, গত ৩০ মার্চ ঈদের আগে বস্ত্রখাতসহ অন্যান্য খাতের রপ্তানি ভর্তুকি বা নগদ সহায়তার চতুর্থ কিস্তির ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জরুরিভিত্তিতে ছাড়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিকেএমইএ। এর মধ্যে গত ১১ এপ্রিল ১ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অর্থ মন্ত্রণালয় ১ হাজার কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু আমাদের আবেদন ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমাদের ক্লেইম রয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার। এর মানে বোঝাই যাচ্ছে, চাহিদার তুলনায় কম হলে কিছুটা সমস্যা থেকেই যাবে। এর পরও অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, কিছুটা কম হলেও সহায়তা করেছে। এর মাধ্যমে কারখানা মালিকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারবেন।
তিনি দাবি করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বের অর্থনীতিকে অনেকটা স্থবির করে দিয়েছে। কারখানা মালিকরা টিকে থাকার সংগ্রাম করছে এবং কঠিন সময় পার করছে দেশের রপ্তানি খাত।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম কালবেলাকে বলেন, বিশ্বমন্দার কারণে অধিকাংশ ফ্যাক্টরিই সমস্যার মধ্যে আছে। কার্যাদেশ কম। ক্রেতার রপ্তানি বিল পরিশোধ না করায় অনেকে ব্যাংকের কাছে দায়গ্রস্ত আছেন। এ অবস্থায় আমরা ব্যাংকগুলোকে উদ্যোক্তাদের পাশ থাকার আহ্বান জানিয়েছি। ঈদ উপলক্ষে এবার সবাই চেষ্টা করছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেনত-বোনাস সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য। আশা করছি, শ্রমিক অসন্তোষ হবে না। সবাই তাদের পাওনা পাবেন।