
ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে আছেন। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দোকান ও গুদামের মালপত্র নিরাপদে রাখার চেষ্টায় কেউ কেউ প্রবেশপথে দিচ্ছেন ইটের দেয়াল। অন্যদিকে, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও। তবে, পণ্য ওঠা-নামা ও খালাস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। জেটি থেকে পণ্যবাহী ১৮টি বড় জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল শনিবার সকাল থেকে সব ধরনের বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। মোখার প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে গ্যাস সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের দোকান-আড়ত থেকে পেঁয়াজ, আলু, চাল, ডাল, রসুন, আদা, চিনি, বিভিন্ন পদের মসলাসহ যাবতীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। গত বছর নভেম্বরে সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তাই ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরেও ভয়ে আছেন তারা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাই মোখা নিয়ে আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়ীরা। আরও জানান, খাতুনগঞ্জে দোকানে ও গোডাউনে হাজার হাজার কোটি টাকার মালপত্র সরিয়ে নিরাপদে রাখার মতো জায়গা নেই। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে কল্পনাতীত। কারণ এ পণ্যগুলো পানি লাগলেই নষ্ট হবে। তিনি জানান, দোকানের সামনে যতটুকু পারছেন দেয়াল তুলছেন ব্যবসায়ীরা। কর্ণফুলীতে আরও ড্রেজিং না হলে স্লুইসগেটসহ কোনো কিছুর সুফল পাওয়া যাবে না। কর্ণফুলীর নাব্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও আশঙ্কার কথা জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।
চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ : এদিকে, ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত ঘোষণা করায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে গত শুক্রবার রাতেই। জারি হয়েছে বন্দরের নিজস্ব সর্বোচ্চ সতর্কতা। সে অনুযায়ী পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয় ধাপে ধাপে। এদিকে গভীর সাগর থেকে কয়েকশ লাইটারেজ জাহাজ কর্ণফুলী নদীতে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরত এসেছে। এগুলো শাহ আমানত সেতুর আশপাশের এলাকায় রাখা হয়েছে।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, জেটিতে থাকা ১৮টি জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ বড় জাহাজ জেটিতে থাকলে ঢেউয়ের কারণে জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বন্দরের জেটিতে থাকা সরঞ্জাম ও কনটেইনারের নিরাপত্তায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে বিমান ওঠানামা বন্ধ :
গতকাল শনিবার ভোর ৬টা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। রানওয়েসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে যেসব ইক্যুইপমেন্ট আছে সেগুলো সুরক্ষিত রাখতে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
গ্যাস সংকটে নগরবাসী
গতকাল শনিবার ভোর থেকেই গ্যাস সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে সীমিত আকারে গ্যাস সরবারহ পাওয়া যায়। চাপ না থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে নগরীর বেশ কয়েকটি গ্যাস ফিলিং স্টেশন। এজন্য বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং অটোরিকশার দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল হতে গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রাশেদ কালবেলাকে বলেন, গ্যাস না থাকায় রান্না করতে পারিনি। হোটেল থেকে খাবার এনে নাশতা করেছি।
সিএনজি অটোরিকশাচালক বাবুল আহমেদ বলেন, সকাল থেকে কোনো স্টেশনে গ্যাস পায়নি। কিন্তু মালিককে ভাড়া দিতে হবে। গ্যাস না থাকার বিষয়টা আগে জানলে বের হতাম না।
নগরীর কুলিয়ারচর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক রিদোয়ান কবির বলেন, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার জন্য আগের রাতে নোটিশ পেয়েছি। যার কারণে কোনো গাড়িতে গ্যাস দিতে পারিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় দুটি সিএসডি এবং ১৬টি এলএসডি আছে। মজুতকৃত খাদ্যশস্যের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন। গুদামের ভেতরে যাতে পানি ঢুকতে না পারে সেজন্য বাফেল ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।