গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়ছে

গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়ছে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে নতুন নতুন খাত আসছে করের আওতায়। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কিছু কিছু খাতে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের পরও নতুন করে ভ্যাটের হার বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্লাস্টিক এবং অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি পণ্যে ভ্যাটের হার বাড়ছে আড়াই শতাংশ। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া বাড়ছে টিস্যু পেপারের ভ্যাট। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে অ্যালুমিনিয়াম কিচেনওয়্যারের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বিদ্যমান। আগামী বাজেটে এই হার আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম পণ্য অর্থাৎ হাঁড়ি-পাতিলের দাম বাড়তে পারে। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ভোক্তার ওপর চাপ আরও বাড়বে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বিদ্যমান। আগামী বাজেটে সেই হার আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার অর্থাৎ প্লাস্টিকের প্লেট-বালতি থেকে শুরু করে এই ধরনের গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এ ছাড়া টিস্যু ব্যবহারেও ভোক্তার খরচ বাড়বে। কারণ আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের টিস্যু পেপারে ভ্যাটের হার আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী বাজেটে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার আড়াই শতাংশ বাড়ানোর একটা প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। মূলত প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও কমবে। সেই সঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর আগে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পরিবেশ অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। পরিবেশ দূষণ বন্ধে গত বছর পাশের দেশ ভারতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এমন উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। তাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ এবং যুবকরাই পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। যেসব খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রয়েছে, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে তারা। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে রাজধানীতে মাথাপিছু ২৩ কেজি প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয়, যা ২০০৫ সালে ছিল ৯ কেজি। ঢাকার বাইরে ২০০৫ সালে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার করা হতো ৩ কেজি, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কেজিতে। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, তার ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য থেকে আসে। প্লাস্টিক বর্জ্যের ৪৮ শতাংশ মাটিতে পড়ে আর ৩৭ শতাংশ পুনরায় ব্যবহৃত হয়; ১২ শতাংশ পড়ে খাল-নদীতে এবং ৩ শতাংশ নালায় গিয়ে মেশে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে হুহু করে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে দূষণ। উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের তুলনায় প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি হলেও, এসব দেশে রিসাইকেল করে তারা ব্যবহার করে। আর বাংলাদেশে রিসাইকেল ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় বাড়ছে পরিবেশ দূষণ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com