লক্ষ্মীপুরে ভিক্ষুকের কোলে রেখে যাওয়া শিশু মাহিনের মায়ের খোঁজ মিলেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির মাসহ পরিবারের লোকজন সদর থানায় আসে ভিক্ষুকের কাছে রেখে যাওয়া শিশুপুত্রকে ফিরিয়ে নিতে।
স্বামী প্রবাসী হলেও খরচের টাকা না পাঠানোয় ‘জেদ করে’ ছেলেকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে যান বলে জানান মা সুরমা বেগম। কিন্তু তিন মাসের সন্তানকে অন্য কারও কাছে এভাবে ফেলে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অনুশোচনায় ফিরিয়ে নিতে হাজির হন থানায়।
তবে আদালতের মাধ্যমে ওই শিশুকে ফিরিয়ে নিতে পারবে তার প্রকৃত অভিভাবকরা। শিশুটি এখন বেলাল হোসেন-নিশি আক্তার নামে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছেই রয়েছে। তারা পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের বাসিন্দা।
সুরমার আরও তিন সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের নাম নেহা (৭), মেজো মেয়ে নুহা (৫), ছোট মেয়ে মাহি (৩)। তাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের চরসীতা গ্রামে। তাদের বাবার নাম মিরন, তিনি সৌদি প্রবাসী। শিশুটির মা জেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেহান উদ্দিন ভূঁইয়া সড়কে সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। তিন মেয়েকে সেখানের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন।
সুরমার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উভুতি গ্রামে। কেন সুরমা তার তিন মাস বয়সী ফুটফুটে শিশুপুত্রকে বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কাছে রেখে নিরুদ্দেশ হলেন–জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ ও সাংবাদিকদের কাছে এর কারণ জানিয়েছেন তিনি।
সুরমা বলেন, চার সন্তান নিয়ে আমি জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। প্রতি মাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি, সন্তানদের খরচ, সংসারের খরচ লাগে। সব মিলিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তাই তার ওপর জিদ করে এ কাজটি করেছি। শিশু সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে দিয়ে অন্য সন্তনদের নিয়ে বাপের বাড়ি ভবানীগঞ্জে চলে যাই। ছেলেকে না নিয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন আমাকে বকাঝকা শুরু করে। পরে বুঝতে পেরেছি কাজটি আমি ঠিক করিনি। বুকের ধনকে রেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে মাহিনের বিষয়ে জানতে পেরে থানায় আসি।
মাহিনের দাদা হাফিজ উল্যা জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে তার ছেলের সঙ্গে সুরমার বিয়ে হয়। সৌদি আরব থেকে তার ছেলে সংসারের খরচ পাঠায়। তারপরও তার পুত্রবধূ মানসিক সমস্যার কারণে তার নাতিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে যায়।
এদিকে গত ১ মার্চ পুলিশ মাহিনকে উদ্ধারের পর কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের তত্ত্বাবধানে দেয়। পরের দিন মাহিনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তার দায়িত্ব সমাজসেবা কার্যালয়কে দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। পরে ওই নিঃসন্তান দম্পতি আদালতের কাছে শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন জানালে শর্ত সাপেক্ষে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই মাহিনের মায়ের খোঁজ পাওয়ার পর ওই দম্পতি শিশুটিকে নিয়ে থানায় যান।
জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ওই দম্পতিকে লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেও শর্ত ছিল শিশুটির পরিবারকে পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এখন তার মা এবং পরিবারের খোঁজ মিলেছে। আমরা আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব। আইনি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবে তার মা। তবে সে সময় পর্যন্ত শিশুটি ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে থাকবে।
গত বুধবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর এলাকায় আধুনিক হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী তার কোলের শিশুপুত্রকে বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান। ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে ওই নারী আর ফিরে আসেনি। ঘটনার ২ ঘণ্টা পর বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে তারা ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে খবর দেয়। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। শহর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা শিশুটি উদ্ধার করে কাউন্সিলরের জিম্মায় দেন।