শাহরিয়ার হাসান
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্ত্রীকে শেষ কথা বলা হলো না শফিকের

স্ত্রীকে শেষ কথা বলা হলো না শফিকের

সকালে অফিসে বের হওয়ার সময় শফিকুজ্জামান তার স্ত্রী পপিকে বলেছিলেন, ফিরে এসে তাকে একটা কথা বলবেন। কী সে কথা, তা জানতে তখন থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন পপি। তবে স্বামীর শেষ কথাটি জানা হলো না তার। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিস্ফোরণে ভবনের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন শফিকুজ্জামান। সেইসঙ্গে চিরদিনের জন্য চাপা পড়ে গেছে তার না বলা কথা।

স্বামীর লাশ নিতে এসে ধানমন্ডি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই আক্ষেপ করতে করতেই বিলাপ করছিলেন পপি জামান। এক ছেলে এক মেয়ের সংসার তাদের। তিনি বারবার বলছেন, মানুষটা সকালে বের হওয়ার সময় বলে গেলেন, এসে কথাটা বলবেন; কিন্তু আমি আর শুনতে পারলাম না।

গতকাল রোববার নিউমার্কেট এলাকায় সুকন্যা টাওয়ারের কাছে বিকট বিস্ফোরণে তিনতলা একটি ভবনের আংশিক ধসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে আগুন। আধঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। নিহত তিনজনের লাশ রাখা হয় ধানমন্ডি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

জানা যায়, নিহত তিনজনই ওই ভবনের তৃতীয় তলায় লায়রা প্রোডাক্টসে কাজ করতেন। শফিকুজ্জামান ও তুষার কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। আব্দুল মান্নান ছিলেন অফিস সহকারী। শফিকুজ্জামানের বাড়ি রাজবাড়ী, থাকতেন সাভারে। আব্দুল মান্নানের বাড়ি গাজীপুর। তুষারের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে।

সরেজমিন হাসপাতালে দেখা যায়, নিহত আব্দুল মান্নানের (৬৫) দুই সন্তানের করুণ আর্তনাদে হাসপাতাল ভারি হয়ে উঠেছে। শফিকুজ্জামানের স্ত্রী ‘না বলা কথা’ শোনার আফসোসে কান্না করছেন। তুষারের পরিবার লম্বা জ্যাম ঠেলে যখন হাসপাতালে পৌঁছান, ততক্ষণে তারা শোকে পাথর।

বাবা আব্দুল মান্নান আহত হয়েছেন শুনে ছোট ভাই শাকিল ও মাকে নিয়ে এসেছেন আশিক। শাকিলের বাবা-বাবা চিৎকারে হাসপাতালে উপস্থিত মানুষের চোখের পানি ধরে রাখা দায় হয়ে পড়ে। তাদের মা শুধু বিড়বিড় করে বলছিলেন, আমার আর কিছু থাকল, না আমি সব হারালাম।

বড় ছেলে আশিক কালবেলাকে বলেন, বাবা সকাল ৮টায় বের হন। ঠিক সাড়ে ১০টার দিকে ফোন এলো ভবন ধসে পড়েছে। সবাই মিলে তাড়াহুড়া করে বের হলাম। ভাবলাম, হয়তো আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন; কিন্তু হাসপাতালে এসে শুনি বাবা সেখানেই মারা গেছেন।

আশিক বলেন, ৩৩ দিন আগে তার ছোট বোন ১২ বছর বয়সে মারা গেছেন। আজ তার বাবা চলে গেলেন। তারা কীভাবে এই শোক সামাল দেবেন। আশিকের কথা বলার সময়ে তার মা ও ছোট ভাই চিৎকার করে কাঁদছিলেন।

তুষারের পরিবার এসেছেন নরসিংদী থেকে। মৃত্যুর খবর পেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলা তার স্বজনরা কোনো শব্দ করছেন না। যতদ্রুত লাশ নিয়ে যাওয়া যায়, সেটিই দেখছেন তারা।

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক অধ্যাপক এ এম এস এম সারাফুজ্জামান (রুবেল) সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে নিহত তিনজন মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। এ ছাড়া তাদের শরীরে দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তবে পুরো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাচের টুকরো ঢুকে গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে লোকসভার ভোট শুরু আজ

পাবনায় চিনিবোঝাই ১২ ট্রাকসহ আটক ২৩

তীব্র গরমে ছয় বিভাগে স্বস্তির খবর

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১৯ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ যেসব আমল

শুক্রবার ঢাকার যেসব এলাকায় যাবেন না

ছাত্রলীগ নেতার পা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলেন এমপি

দাজ্জালের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো যে সাহাবির

লোহাগড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ / কুপিয়ে জখম ৩

১০

চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারি

১১

৮০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা, সতর্কতা জারি

১২

পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন মিতিয়া ওসমান

১৩

৮৪ জন গ্রাউন্ড সার্ভিস এসিস্টেন্ট নিয়োগ দিল বিমান

১৪

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের শাড়ি বন্ধুদের দিলেন ব্যারিস্টার সুমন

১৫

‘নতুন প্রজন্মের মাঝে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তাৎপর্য তুলে ধরার আহ্বান’

১৬

লক্ষ্য যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন  / ৮৪ জন গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দিল বিমান

১৭

নওগাঁয় সিআইডি পরিচয়ে চাঁদাবাজি, অতঃপর...

১৮

ইন্দোনেশিয়ায় অগ্ন্যুৎপাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১১ হাজার মানুষকে

১৯

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকা শক্তি : দীপু মনি

২০
*/ ?>
X