মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ০৯:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তামাক চাষে বিপন্ন কৃষিজমি

তামাক চাষে বিপন্ন কৃষিজমি

শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, প্রাণ-প্রকৃতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তামাক। উৎপাদন থেকে সেবন, প্রতিটি ধাপে তামাকের ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪০ লাখ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এর মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ তামাক উৎপাদিত হয় বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ ১৩তে রয়েছে। বিশ্ববাজারের ১ দশমিক ৩ শতাংশ তামাক উৎপাদিত হয় এ দেশে।

অনুসন্ধান বলছে, তামাক চাষের শুরু থেকে বিক্রয় পর্যন্ত প্রায় ৯ মাস সময় লাগে। ফলে এই জমিতে অন্য খাদ্যশস্য চাষ করা অসম্ভব। আবার তামাক চাষ যেহেতু মাটির উর্বরতা হ্রাস করে, তাই এই জমিতে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ক্ষমতাও কমতে থাকে। একই জমিতে পরপর দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। উর্বর জমিতে ক্রমবর্ধমানহারে তামাক চাষ হওয়ায় খাদ্য উৎপাদনের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যপণ্য ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে দেশে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাকচাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তামাক নয়, খাদ্য ফলান।

তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও শক্তিশালী করতে হবে। সিগারেটসহ সব তামাক পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। তামাক চাষ নিরুৎসাহিতকরণে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধসহ একটি খসড়া সংশোধনী কেবিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খসড়াটি যত দ্রুত চূড়ান্ত হবে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ ততই ত্বরান্বিত হবে।

তামাক চাষ টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি : বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৬০০ একর। ২০২১ মৌসুমে বোরো, গম এবং আলুর একরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৮১ কেজি, ১ হাজার ৩৩৫ কেজি এবং ৮ হাজার

৫৩৮ কেজি। তামাকের পরিবর্তে এই জমিতে বোরো চাষ করা হলে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪২৮ টন বোরো, গম এবং আলু চাষ করা হলে যথাক্রমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৬ টন গম এবং ৮ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৭ টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব হতো।

তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি : তামাকচাষিদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন গ্রিন টোব্যাকো সিকনেস নামে নিকোটিন বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত। তামাক পাতা নাড়াচাড়ার সময় ত্বকের মাধ্যমে নিকোটিন শোষিত হওয়ার কারণে এই রোগ হয়। ক্ষেতে কাজ করার সময় অজ্ঞাতসারেই একজন তামাকচাষি দিনে প্রায় ৫০টি সিগারেটের সমপরিমাণ নিকোটিন শোষণ করে থাকে। এমনকি তামাকচাষিদের শরীর, ব্যবহৃত জামা ও জুতার সঙ্গে বিষাক্ত উপাদান বাড়িতে চলে আসায় পরিবারের অন্যান্য সদস্য বিশেষ করে শিশুরা পরোক্ষ স্বাস্থ্যক্ষতির শিকার হয়। তামাক চাষের মৌসুমে নারী এবং শিশুদের বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে হয় বিধায় তারাও মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যক্ষতির শিকার হয়। শিশুদের দৈহিক ওজন কম থাকায় ত্বকের মাধ্যমে নিকোটিন শোষিত হওয়ায় তারা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে থাকে।

তামাক চাষ মাটির স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি: তামাক দ্রুত মাটিকে অনুর্বর করে ফেলে। ভুট্টার তুলনায় তামাক মাটি থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেশি নাইট্রোজেন, সাত গুণ বেশি ফসফরাস এবং আট গুণ বেশি পটাশিয়াম শোষণ করে থাকে। একক জাতীয় ফসল (মনোক্রপ) হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ ও রোগের আক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য তামাক চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বেশি ব্যবহার করতে হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান পরবর্তী সময়ে পানির সঙ্গে ধুয়ে আশপাশের নদী, খাল, জলাশয় ও খাবার পানির উৎসগুলোকে দূষিত করে।

তামাক চাষ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি : টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩১ শতাংশ বন নিধনের পেছনে তামাক চাষ দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবানে তামাক পাতা শুকানোর কাজে এক বছরেই প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। এজন্য বছরে ২৯ লাখ পূর্ণবয়স্ক গাছ কাটা হয়। স্থানীয় বন থেকে এসব কাঠ সংগ্রহ করায় পাহাড়গুলো বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছে। সেখানে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নিকটস্থ জলাশয়ে মিশে মৎস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তামাক চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক হালদা নদীর পানিতে মিশে যাওয়ায় কারণে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্রটি হুমকির মুখে পড়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বান্দরবানের সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি

পাবনা কারাগারে কয়েদির মৃত্যু

জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা / মাইক্রোবাস-মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে নিহত দুই

নৌপথে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাসদস্যদের ফেরত পাঠাবে বাংলাদেশ

তীব্র দাবদাহে রাজশাহীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা : জাতিসংঘ

‘গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে’

বন্যপাখি খাঁচায় বন্দি করে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন

অনলাইনে ভাবির নগ্ন ছবি প্রকাশ দেবরের, অতঃপর...

১০

আতিফের জন্য হাহাকার 

১১

টেকনাফ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও ১৩ বিজিপি সদস্য

১২

৪ জেলায় ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৩

ইসরায়েলের হামলা / ইরানের আকাশ এড়াতে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল

১৪

মারধরের শিকার চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দেখতে হাসপাতালে পলক

১৫

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

১৬

সারা দেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট

১৭

সাতকানিয়ায় প্রতীমা ভাংচুরে যুক্তদের বিচারের দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের

১৮

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটালেন আ.লীগ নেতা

১৯

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পরীক্ষার রুটিনে পরিবর্তন আনল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

২০
*/ ?>
X