শেরপুর শহরের পিচঢালা সড়কের দুপাশে দীর্ঘ দেয়ালে ঘেরা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (এটিআই) ফসলের ক্ষেত। নানা জাতের নানা ফসল চাষ করা হয় সেখানকার বিস্তীর্ণ জমিতে। জেলা শহর থেকে সদর হাসপাতালের দিকে প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলেই সবুজ ভূমিতে চোখ জুড়িয়ে যায়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সেখানে সবুজ-বেগুনি ধানের চারা লাগিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় পতাকা। চোখ জুড়ানো চিত্রকর্মটি করেছেন শেরপুর এটিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাইফুল আজম খান।
পিচঢালা সড়কের পাশের সবুজ কৃষি জমিতে চোখ রাখতেই দেখা যায় এই চিত্রকর্ম। জিঙ্ক সমৃদ্ধ সবুজ আর বেগুনি ধানের মিশ্রণে জাতীয় পতাকার এক অনন্য শস্য চিত্র দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। জাতীয় পতাকার চতুর্ভুজের বেশিরভাগ জুড়ে লাগানো হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ জাতের সবুজ রঙের ধান। আর মাঝখানে লাল বৃত্তের স্থানে লাগানো হয়েছে জিঙ্ক সমৃদ্ধ বেগুনি রঙয়ের ধান। এরপর পতাকার অংশটুকু আকর্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান রাখতে পুরো জমিতে রোপণ করেছেন সবুজ ধান।
শস্যক্ষেতের পতাকাটি দৈর্ঘ্যে ১৬০ ফুট, প্রস্থে ৯৬ ফুট এবং লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ ৩২ ফুট। পতাকার সবুজ অংশে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ ও হাইব্রিড ধান এবং লাল অংশে দুলালী সুন্দরী ধান ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিদিনই এই পথে চলাচলকারীরা এখানে এসে থমকে যান শস্য চিত্রের পতাকা দেখতে। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে ছবি তোলেন সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানক্ষেতের।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাইফুল আজম খান বলেন, শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক। এ ছাড়াও এই ধানের পুষ্টিমান বেশি এবং এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু। এই ধান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে এর চাষাবাদ বাড়বে।
এটিআইর শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদ বলেন, আর্টের মাধ্যমে যে কোনো শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলতে পারা একটি শৈল্পিক গুণ। এতে মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা নানা প্রতিভার বিকাশ ঘটে এসব শিল্পকর্মে। আমরাও আমাদের ব্যবহারিক কাজের সময় এই ক্ষেতের পরিচর্যার সুযোগ পেয়েছি।
পথচারী আলমগীর হোসেন বলেন, সবুজ-বেগুনিতে এত সুন্দর ধানের জমি আর দেখিনি। লোকমুখে শুনে জমি দেখতে এখানে আসেছি। এ জাতীয় ধান আবাদ করার শখ আছে। এ ধানের চারা পেলে আমিও আবাদ করব।
ঢাকলহাটির বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের ধান যে এখন চাষাবাদ হচ্ছে তা প্রথম দেখার সুযোগ হলো। সবুজ-বেগুনিতে জাতীয় পতাকা দেখে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় আমি প্রতিদিন বিকেলে এসে বসে থাকি, উপভোগ করি।