ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা তুলে না নেওয়ায় বাদীর বাড়ির চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে আসামি ও তার পরিবার। এতে মামলার বাদীসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচটি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চরডোমকান্দি গ্রামের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের জিয়ারুল সরকার ৬ বছর আগে প্রতিবেশী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা জীবিত না থাকায় তার জ্যাঠা নূরুল ইসলাম ওরফে ধলু সরকার বাদী হয়ে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। এ অবস্থায় মেয়েটি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সেই সন্তানের বয়স যখন ৬ মাস, সে সময় শিশুটিকে চুরি করা হয়। পরদিন সিরাজগঞ্জ থেকে শিশুটি উদ্ধার ও জিয়ারুলের বিরুদ্ধে পৃথক অপহরণ মামলা করা হয়। এরপর জিয়ারুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই মেয়েকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে জিয়ারুল। এরপর সে জামিনে বেরিয়ে আসে; কিন্তু জামিন নেওয়ার পর থেকে আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানের। বরং মামলা থেকে রেহাই পাওয়াসহ ওই স্ত্রীকে তালাক দিতে সে প্রস্তাব পাঠায়। এ নিয়ে এলাকায় কয়েক দফা সালিশ-বৈঠকও হয়।
জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে মোহরানার ৩ লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেয় বাদীর পরিবার; কিন্তু জিয়ারুল তা
দিতে অস্বীকৃতি জানালে বৈঠক ভেস্তে যায়। পরে ওই রাতেই জিয়ারুল ও তার পরিবারের লোকজন বাদীর পরিবারসহ পাঁচটি পরিবারের চলাচলের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়।
বেড়ার কারণে আটকে পড়া লেবু সরকার বলেন, ‘হামাকেরে বাড়ির সামানে দিয়ে বাঙ্গালি লদী, পেছন দিয়ে ডোমকান্দি খাল। বাড়িত থ্যাকে বাইর হওয়ার একটাই আস্তা। সেডা বন্দ করে দিছে।’
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘গ্রামের মানুষ সালিশ দরবার করলেও ওরা (জিয়ারুল) মানবের চায় না, উল্টো অন্য মানুষের সমস্যা করে।’
বৈঠকে উপস্থিত ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এমদাদুল হক বলেন, জিয়ারুল লোকজন নিয়ে রাস্তায় বেড়া দিয়েছে। তাদের বলেছি, সোমবার সন্ধ্যার পর গিয়ে বেড়া কেন দিল—তা দেখা হবে। বেড়াটি সরিয়ে ফেলা হবে।
এ বিষয়ে জানতে জিয়ারুলের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী মলি বেগম বলেন, জিয়ারুল বাইরে গেছেন। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সারিয়াকান্দি থানার ওসি রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, থানায় কেউ জানায়নি। যেহেতু বিষয়টি জানলাম, পুলিশ পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।