দুদককে ব্যবহার করে হয়রানি করা হচ্ছে : জাহাঙ্গীর আলম

দুদক কার্যালয়ে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম
দুদক কার্যালয়ে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দুদককে ব্যবহার করে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। গতকাল রোববার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাখ লাখ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি। মেয়রের পদের মেয়াদ পাঁচ বছর; কিন্তু তিন বছরের মাথায় ঢাকা থেকে চিঠি দিয়ে অবৈধভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে কতটুকু আইন অনুসরণ করা হয়েছে, সে বিচার আপনাদের। তিন বছরে আমি সরকারের কাছ থেকে সম্মানী ভাতাসহ অন্য কোনো সুবিধা গ্রহণ করিনি।

তিনি বলেন, সরকার আমাকে দুটি প্রজেক্টে মাত্র ৬০০-৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; কিন্তু দুদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? এটা কাল্পনিক, বানোয়াট ও মিথ্যা। আমাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করে হয়রানি করা হচ্ছে। যারা মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা চলছে। আমার মা মেয়র প্রার্থী, আমি প্রধান সমন্বয়কারী। ২৫ তারিখে ভোট। ২২ তারিখ নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। এমন সময় দুদক আমাকে ডেকেছে। নির্বাচনের সময় আজ কেন আমাকে আসতে বাধ্য করল। একটি মহল দুদককে ব্যবহার করে আমাকে হয়রানি করছে। একজন জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই আজ দুদকে এসেছি। আমি সময় চেয়ে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু আমি জানতে পারিনি, আমাকে সময় দেওয়া হয়েছে কী না। সেটা জানতেই আজ আমি এখানে এসেছি। শুধু একটা কথা বলতে চাই, আমি গাজীপুরের মানুষের জন্য কাজ করেছি। সেই কাজের পুরস্কার না দিয়ে, যারা অপরাধী, মিথ্যা চিঠি চালাচালি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি পলাতক মানুষ নই, বাংলাদেশ থেকে যারা অর্থ পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আজ যিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাকে হাইকোর্ট ২১টি বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে, যারা আমেরিকায় অর্থ পাচার করছে, তাদের দুদক ডাকল না। আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিলাসী জীবনযাপন করিনি, সেজন্য হয়রানি করা হচ্ছে। আমি দুদকের কাছে ন্যায় বিচার আশা করি। আমি নির্দোষ, বিনা কারণে দুদককে ব্যবহার করে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

দুদকের তথ্যমতে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ৩ বছরের বেশি সময় মেয়র থাকাকালে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খাতে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়ম, সড়ক প্রশস্তকরণের নামে জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে আত্মসাৎ, ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম। অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমকে ২১ ও ২২ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com