দুই পায়ে ব্যান্ডেজ করা একটি মরদেহ আট দিন ধরে পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। কে তার স্বজন, তিনি কীভাবে মারা গেলেন—তাও জানা যাচ্ছে না। আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করা হলেও তাতে বাধে বড় বিপত্তি। গত ১৮ এপ্রিল থেকে মরদেহটি মর্গের হিমঘরে রয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্যানুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম আসলাম, বাবার নাম কালাম। বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার জাদ্দুর গ্রামে। এই ঠিকানা নিয়েই বেধেছে বিপত্তি। পুলিশ বলছে, সদরপুরে জাদ্দুর গ্রাম নামে কোনো গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাাচ্ছে না। এ জন্য ওই ব্যক্তির স্বজনদেরও তথ্য মিলছে না।
যেভাবে মর্গে এলো ব্যান্ডেজে মোড়ানো লাশ : হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৮ এপ্রিল ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তখনই তার দুই পায়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো ছিল। পরনে ছিল একটি ময়লা লুঙ্গি, সারা শরীর ছিল ধুলোমাখা। হাসপাতালের খাতায় তার নাম লেখা হয় মো. মাসুদ, বয়স ৪০। বাবার নাম আজগর এবং বাসা কামরাঙ্গীরচর।
হাসপাতালে নিয়ে আসা ইসমাইল পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মাসুদ। তাকে গাবতলী এলাকা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ওই ব্যক্তিকে সকালে হাসপাতালের আনার পর দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর পরপরই কৌশলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ইসমাইল নামের ব্যক্তি। হাসপাতালে কাগজপত্রে থাকা তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়।
পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ভর্তি কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, মৃত ব্যক্তি গাবতলী এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। এরপর দারুস সালাম থানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, ওইদিন ওই এলাকায় কোনো সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি! পরে বিষয়টি শাহবাগ থানায় জানানো হয়।
দারুস সালাম থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশার বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একটা সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ দেওয়া হয়। তারা যাচাই করে দেখেছেন, ওইদিন তার থানা এলাকায় কোনো সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। ঈদের আগে হওয়ায় সে সময় পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি ছিল। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই পুলিশ জানত।
শাহবাগ থানা পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিনেও ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় গত মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় একটি জিডি করে পুলিশ। এরপর সিআইডির ক্রাইমসিন ওই ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে। তবে তাতেও ঠিকানায় উল্টাপাল্টা তথ্য পাওয়া যায়।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম বলেন, আট দিন ধরে মর্গে মরদেহটি পড়ে আছে। ফিঙ্গার প্রিন্টে পাওয়া তথ্যানুযায়ী আসলাম নাম শনাক্ত করা হয়। বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার জাদ্দুর গ্রাম উল্লেখ রয়েছে।
এরপর তারা বিষয়টি সদরদপুর থানাকে জানান। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, সদরপুরে ওই নামে কোনো গ্রাম নেই।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পুরো ঘটনাটি নিয়েই রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় পাওয়া গেলে তিনি কি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যেত। পুলিশ প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে।