
এমন একটা সময় ছিল, যখন ব্রিটিশ রাজপরিবার বলতে যেন প্রিন্সেস ডায়ানাকে বোঝাত। সৌন্দর্য ও মানবতার প্রতীক হয়ে ওঠা ডায়ানা নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে থাকতেন। ডায়ানা কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন, তার কোনো একটা খবর মিস হলে যেন জাত যেত ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের। তাই তো পাপারাজ্জিরা সবসময় তার পিছু নিত। কিন্তু ডায়ানা ছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যে একজন রানি রয়েছেন কিংবা সে পরিবারের আরও সদস্য রয়েছেন, সেটা যেন অনেকটা ভুলেই যেত সংবাদমাধ্যমগুলো। তাই তো ব্রিটেন ছাপিয়ে সারা বিশ্বেই এ রাজপরিবারের যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন, তিনি হলেন প্রিন্সেস ডায়ানা।
ডায়ানাবিহীন সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এখন যেন অনেকটা আলো কাড়ছেন তার বড় পুত্রবধূ প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন। ডায়ানার মতো অতটা আবেদনময়ী না হলেও কম যান না কেটও। চোখধাঁধানো পোশাক পরে প্রায় প্রতিদিনই হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ফ্যাশনের নতুন এক আইকনও হয়ে উঠেছেন তিনি। কেট কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো কাভার করছে। সংবাদমাধ্যমে তার এভাবে জায়গা করে নেওয়ার বিষয়টিতে অনেকে তার শাশুড়ি ডায়ানার সময়টাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এভাবে সংবাদমাধ্যমে অতিরিক্ত জায়গা পাওয়ায় রাজা চার্লস পুত্রবধূর ছায়ায় ঢাকা পড়ছেন কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। সম্প্রতি লন্ডনে ‘চেলসি ফ্লাওয়ার শো’ নামে পাঁচ দিনব্যাপী এক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে হাজির হয়েছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও
রানি ক্যামিলা। রাজা-রানি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে এটাই তাদের প্রথম উপস্থিতি। সে অনুষ্ঠানে পরে আকস্মিকভাবে হাজির হয়েছিলেন তাদের পুত্রবধূ কেট মিডলটন। কিন্তু রাজা-রানি নন, সে অনুষ্ঠানের সব আলো যেন কেড়েছিলেন পুত্রবধূ কেট। সংবাদমাধ্যমগুলো রাজা ও রানির সংবাদ প্রচারের বিষয়ে যতটা না মনোযোগী ছিল, তার চেয়েও বেশি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে কেট মিডলটনকে নিয়ে। আর এটাই ভাবিয়ে তুলছে রাজপরিবারকে। রাজপরিবারের ভেতরের এক ব্যক্তি ডেইলি মেইলকে বলেন, এটা অত্যন্ত লজ্জার যে, সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে রাজা-রানির উপস্থিতির খবরকে সংবাদমাধ্যমে কেটের চেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিক দিয়ে কেট তার শাশুড়ি ডায়ানার জায়গা দখল করতে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন তিনি। উল্লেখ্য, পুত্র উইলিয়াম ও পুত্রবধূ কেট মিডলটন সংবাদমাধ্যমে নিজের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাক, এটা চান না রাজা চার্লস। ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি তার বিস্ফোরক স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-এ আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে এটাও তুলে ধরেছেন। হ্যারি সেখানে দাবি করেন, তিনি ও তার ভাই উইলিয়াম কোন অনুষ্ঠানে যাবেন আর কোনটাতে যাবেন না, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন তাদের বাবা চার্লস। হ্যারি লেখেন, ‘উইলিয়াম ও কেট সংবাদমাধ্যমে তাদের চেয়ে বেশি কাভারেজ পাক, এটা বাবা ও ক্যামিলা কখনোই পছন্দ করতেন না। এ ধরনের অনেক ঘটনার জন্য তারা প্রকাশ্যে অনেকবার উইলিয়ামকে বকেছেন। চার্লস-ক্যামিলা কোথাও যাচ্ছেন আর একই দিন অন্য কোনো অনুষ্ঠানে ইউলিয়াম ও কেট যাবেন, এমন কোনো দিন এলে তাদের সেখানে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হতো। কারণ, চার্লস ও ক্যামিলা মনে করতেন এ রকমটা ঘটলে পরদিন সংবাদমাধ্যমে তাদের চেয়ে উইলিয়াম ও কেটই বেশি গুরুত্ব পাবেন।’ হ্যারির ভাষায়, ‘তারা (চার্লস-ক্যামিলা) এটা সহ্য করতে পারতেন না।’ বিষয়টি পছন্দ না করলেও চেলসি ফ্লাওয়ার শোতে পুত্রবধূ কেটের এ আকস্মিক উপস্থিতিতে রাজা ও রানির চেহারায় অবশ্য কোনো বিরক্তি দেখা যায়নি বলে জানা গেছে।