সাম্প্রতিক দিনগুলোয় অপ্রত্যাশিত সব ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা। চলতি মাসেই তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক। এর পরপরই অর্থসংকটে সুইস ব্যাংক ক্রেডিট সুইস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। শেষ পর্যন্ত ১৬৭ বছরের ব্যাংকটি অস্তিত্ব হারিয়ে টিকে রইল সুইজারল্যান্ডের শীর্ষ ব্যাংক ইউবিএস এজির অংশ হয়ে।
এর মধ্যেই জার্মান ঋণদাতা ডয়চে ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ডয়চে ব্যাংক বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এর প্রভাবে ধস নেমেছে ইউরোপের অন্য বড় ব্যাংকগুলোর শেয়ারে। আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ব্যাংক খাত নিয়ে উদ্ভূত সংকট। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে প্রশ্ন তুলেছে ইকোনমিস্ট- ব্যাংকিং গোলযোগ কি যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ডের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
আলজাজিরা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত শুক্রবার ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জে ডয়েচে ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। আরেক জার্মান ব্যাংক কমার্স ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। ফ্রান্সের সোসিয়েতে জেনারেলের শেয়ারের দাম কমে ৫ দশমিক ৯ ও অস্ট্রিয়ার রেইফাইসেনের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ দিন লেনদেন শেষে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে বলেন, ইউরোপের ব্যাংকগুলো নিরাপদ আছে এবং তারল্য সংকট নেই।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডয়েচের সঙ্গে ক্রেডিট সুইসের পার্থক্য অনেক। ক্রেডিট সুইস অলাভজনক। সেইসঙ্গে ব্যাংকটিতে ছিল নানা আইনি জটিলতা। আর এর প্রায় সব আমানত ছিল বীমাহীন। অর্থাৎ, পুরো পরিস্থিতিই ছিল প্রতিকূল। অন্যদিকে অনেক তিক্ততার মধ্য দিয়ে পুনর্গঠনের পর ডয়েচে ব্যাংক এখন লাভজনক। এর খুচরা আমানতের প্রায় ৭০ শতাংশ বিমার আওতায়। নগদ রাখার ব্যাপারেও তারা সতর্ক। ২০১৬ সালের বিপর্যয়ের মুখে আমানতের অবস্থা খারাপ ছিল। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির এখন যথেষ্ট তরল সম্পদ রয়েছে, যা ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ বিনিময় করতে পারে।
শুক্রবার বাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা, ডয়েচে ব্যাংক কি পরবর্তী ক্রেডিট সুইস হতে যাচ্ছে? জার্মান চ্যান্সেলর সে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের মডেলের দিক থেকে ডয়েচে ব্যাংক আধুনিক এবং সুসংগঠিত লাভজনক একটি ব্যাংক। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।