জলাশয়ে জাল বসিয়ে মাছ চাষের পদ্ধতি সবারই জানা। তবে এবার মাছ নয়, খালে জাল বসিয়ে করা হচ্ছে সবজি চাষ। প্রায় এক কিলোমিটার খালে জেগে ওঠা চরে ধাপে ধাপে লাগানো হয়েছে লালশাক, লাউ, পেঁপেসহ শীতকালীন সব সবজি। হাঁস-মুরগির উৎপাত ঠেকাতে চর ঘিরে বসানো হয়েছে জালের নিরাপত্তা বেষ্টনী।
খাল দখল করে শাকসবজি চাষের এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মাস্টার লেন এলাকা-সংলগ্ন খালে। এটি স্থানীয়দের কাছে মহেষ খালের সংযোগ-খাল হিসেবে পরিচিত। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ও ঠেলাঠেলিতে খালটি ভরে উঠেছে
ময়লা-আবর্জনায়। জেগে উঠেছে চর। আর সেখানেই শাকসবজির চাষ করছেন স্থানীয়রা। এর পরও যেন দেখার কেউ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দিকে ঠেলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) স্থানীয় কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী।
পাহাড়তলীর মূল সড়কের পুলিশ লাইন্স-সংলগ্ন এলাকার নাম মাস্টারলেন। সেখান থেকে সোজা সড়কটি চলে গেছে রেলওয়ে স্ক্রাব কলোনির দিকে। স্ক্রাব কলোনি থেকে মাস্টারলেন পর্যন্ত সড়ক ঘেঁষা এ খাল ভরে উঠেছে প্লাস্টিক, বর্জ্য আর ভরাট মাটিতে। পথ নেই পানি চলাচলের। মাটি ভরাট হয়ে জেগে ওঠা চরগুলোতে গজিয়েছে ঘাস ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মাস্টারলেন-সংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ৮টি পয়েন্টে ধাপে ধাপে জাল, প্লাস্টিক, পাটের বস্তা, মশারি টানিয়ে লাগানো হয়েছে শাক, লাউ, পেঁপেসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি। চরে বেড়াচ্ছে হাঁস-মুরগি।
পাহাড়তলী এলাকার স্থানীয়রা জানান, এক সময় ভরা বর্ষায় হাঁটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো আশপাশের এলাকায়। চার বছর আগে খালের দুপাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের পর সেই ভোগান্তি কমেছে। সম্প্রতি ময়লা-আর্বজনায় খালটি ভরাট হলে সেখানে চর জাগে। সেই চরেই এখন জালের ঘেরা দিয়ে শীতকালীন সবজি চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসবের তদারক না করায় আক্ষেপ করেছেন বাসিন্দারা।
ভরাট হওয়া এ খালের উৎসস্থল চট্টগ্রামের ফ’য়স লেক এলাকার সংযুক্ত খাল থেকে। সেটি পাহাড়তলীর বুক চিরে মাস্টারলেন থেকে পাঞ্জাবিলেন হয়ে চলে গেছে সরাইপাড়া। এরপর হালিশহর হয়ে সরাসরি সাগরে মিশেছে। পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আশপাশে প্রচুর পাহাড় থাকার কারণে বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামে এ খালে। প্রবল পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশনের মূল পথ হয়ে ওঠে এ খাল।
মাস্টারলেন এলাকার গৃহিণী রাবেয়া বেগম কালবেলাকে বলেন, ৪০ বছর ধরে রেলের কলোনিতে থাকি। আগে বর্ষায় ঘরে পানি হতো, এখন হয় না। খালে যে চাষাবাদ করা হচ্ছে, তা আশপাশের লোকজন করে। আমরা সবাই একই এলাকায় থাকি। কিছু বলতে গেলে রেষারেষি হবে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এ খাল সম্ভবত মহেষ খালের সংযোগ খাল। সেখানে সিডিএর অধীনে কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে না দিলে তো আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি না। খাল সংস্কারে বাজেট, পরিকল্পনা দেবে তারপর কাজ করা সম্ভব।
তবে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও এ বিষয়ে সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক আহমেদ মইনুদ্দীনের বক্তব্য জানা যায়নি।