কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। তার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করেন। এস কে সিনহার টাকায় সেখানে তিনতলা বাড়ি ক্রয় করেন তিনি। এ ঘটনায় করা মামলার সঠিক তদন্তের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রে এস কে সিনহা এবং অনন্ত সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ আদেশ কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজিতে লিখিত আদেশ পাঠাবে দুদক।
গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এস কে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।’
জব্দ হওয়া তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হলো— ম্যাসাচুসেটসের সিটিজেন ব্যাংক বোস্টনে পারসোনাল চেকিং অ্যাকাউন্ট, ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে সেফ ডিপোজিট বক্স ও ভ্যালে ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্ট। এ ছাড়া সম্পত্তি হিসেবে নিউজার্সির প্যাটারসনের জ্যাসপার স্ট্রিটের ১৭৯-এ অবস্থিত বাড়িটি জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দ চেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে আবেদন করেন। এরপর দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান আদালতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দেন। আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও সম্পত্তি অর্জন করেছেন। তার একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়েছে। সেসব সম্পদ ও সম্পত্তি অবৈধ উপায়ে অর্জিত হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল কালবেলাকে বলেন, ‘বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশটি কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আদেশটি ইংরেজিতে লিখে বিদেশে পাঠানো হবে। সেখানে ইন্টারপোল, এফবিআই বা অন্য কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে।’
২০২২ সালের ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে তিনতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়ায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।
২০২১ সালের ৯ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলার পৃথক দুই ধারায় এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া তার অ্যাকাউন্টে অবরুদ্ধ থাকা ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা সম্পদ অর্জন করে ভাই ও আত্মীয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন এস কে সিনহা। এ ঘটনায় দুদকের করা আরেকটি মামলা তদন্তাধীন।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বিচারিক ক্ষমতার কার্যকাল শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।