আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:০৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রকাশকদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি

প্রকাশকদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি

বইমেলা এখন শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। আগামীকালই অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩-এর পর্দা নামবে। করোনার কারণে দুই বছর পর পূর্ণ পরিসরে মেলা হওয়ায় এবার অনেক দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। সে কারণে প্রকাশকদের প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক বেশি। তবে প্রাপ্তির জায়গায় আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মেলা আয়োজন নিয়ে বাংলা একাডেমির পরিকল্পনার অভাব দেখছেন অনেক প্রকাশক। তাদের মতে, বইমেলা আয়োজন নিয়ে অন্তত ছয় মাস আগ থেকে পরিকল্পনা সাজাতে হবে মেলা কর্তৃপক্ষকে।

বইমেলার শেষ দিকে বই বিকিকিনি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। গতকাল রোববারও বই বিক্রি ভালো হয়েছে বলে ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল কালবেলাকে বলেন, মেলার শেষ মুহূর্ত অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কাটছে। এখন যারা স্টলে আসছেন, তাদের ৮০ শতাংশই বই কিনছেন। শেষ দিকে বই বিক্রি বাড়ায় আমরা খুশি।

এবারের বইমেলা কেমন দেখেছেন, জানতে চাইলে কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে নাসির আহমেদ সেলিম বলেন, করোনার পর বইমেলা হওয়ায় আমাদের প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। তবে মেলায় আগের চেয়ে উন্মাদনা কিছুটা কমেছে। আগে প্রতিদিন মেলায় লোকসমাগম হলেও এখন শুধু বন্ধের দিনে লোকসমাগম হচ্ছে। আবার তাদের মধ্যে দর্শনার্থী বেশি, পাঠক কম।

তিনি বলেন, এবার বইমেলা উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট শুধু বন্ধের দিন খোলা না রেখে প্রতিদিন খোলা রাখা উচিত ছিল। এ ছাড়া আগে মেলায় ইট বিছিয়ে সমতল করা হতো; কিন্তু এবার সেটি করা হয়নি। ইট না বিছানোয় উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা কষ্টকর হয়ে গেছে। এদিকটায় মেলা কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার ছিল।

অন্য প্রকাশের নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি ঘটেনি। মেলায় অনেক মানুষ এসেছে সত্যি, তবে সেভাবে বই বিক্রি হয়নি। স্টল বিন্যাস থেকে শুরু করে মাঠটাকে মেলা উপযোগী করে গড়ে তোলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আরও মনোযোগী হতে হবে। শেষ মুহূর্তে এসব কাজ করা হয় বলে দেখা যায়, মাঠে হাঁটাচলার পথ মসৃণ নয়। দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে আরও গুছিয়ে স্টল বিন্যাস করা যেতে পারে।

পুথিনিলয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল বলেন, কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলোর স্টলের কারণে প্রকাশনীর স্টলগুলো ঢেকে গেছে। বইমেলা এতটা কমার্শিয়াল হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, মেলা নিখুঁত করতে হলে বাংলা একাডেমির উচিত প্রকাশকদের সঙ্গে বসে একটা মহড়া দেওয়া। মেলা রিভিউ করা উচিত ছিল; কিন্তু সেটি কখনোই হয় না।

উৎস প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তফা সেলিম বলেন, কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার বইয়ের দাম কিছুটা বেশি ছিল। তার একটা প্রভাব তো আমরা মেলায় দেখলাম। অন্যান্য বছরের তুলনায় বই কেনাবেচা কমেছে।

তিনি বলেন, এবার মেলা সংকুচিত করা হয়েছে। দুই স্টলের মাঝে জায়গা কম থাকায় যারা ছুটির দিনে মেলায় এসেছেন, তারা অনেক অস্বস্তিতে ভুগেছেন। সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, এবারের বইমেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সবার বই বিক্রি হয়নি। কারও বই বেশি বিক্রি হয়েছে, কারও কম হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একেবারে অসন্তোষ নেই। তিনি বলেন, বইমেলার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আগের বছর মেলায় কী কী ত্রুটি ছিল, বাংলা একাডেমির উচিত তার ওপর জরিপ করা।

আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি বাবুল বলেন, মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা আছে। এবারও ধুলা নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ধুলার কারণে প্রবীণ অনেক পাঠকই বইমেলা এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেন, মেলায় ২০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান পাইরেটেড বই বিক্রি করেছে। নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের পাইরেটেড বইয়ের এক্সটেনশন হয়ে গেছে বইমেলা। পাইরেটেড বই বেশি বিক্রি হওয়ায় এবার গতবারের চেয়ে বই বিক্রি ২৫ শতাংশ কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বইমেলার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা দরকার, সেটি এবারও হয়নি। শিশু কর্নারে মানুষ সহজে হাঁটতে পারে না। এ কর্নারে ১০টি প্রতিষ্ঠানই শুধু শিশুদের বই বিক্রি করেছে। বাকিরা এক জায়গা থেকে বই ছাপিয়ে এনে সেগুলোর মোড়ক পরিবর্তন করে বিক্রি করছে। এসব বইয়ের নেই কোনো আইএসবিএন নম্বর। মেলা কর্তৃপক্ষ ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করতে বললেও এসব নেট বইয়ের কমিশনের শেষ নেই। এর দ্বারা পাঠকদের প্রতারিত করা হচ্ছে কিনা, সেটিও দেখা দরকার। এ ছাড়া বইমেলার নীতিমালায় আছে, বাংলাদেশে প্রকাশিত মৌলিক বই বিক্রি হবে; কিন্তু কলকাতার বইও বিক্রি হয়েছে।

প্রকাশকদের মতামতের বিষয়ে অবহিত করে বইমেলার সার্বিক আয়োজন কেমন ছিল জানতে চাইলে একুশে বইমেলার সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, সেগুলোতে আমি সফল বলে মনে করি। স্টলের লাইন বা সারিতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। তিনি বলেন, মেলায় ধুলা নিয়ে কথা ওঠে। দীর্ঘ ৬ থেকে ৭ মাস এখানে পানি থাকে না। তবু আমরা চেষ্টা করেছি নিজস্ব অর্থায়নে পাইপ দিয়ে পানি দেওয়ার। মূল মেলায় এত ধুলাবালি ছিল না। টিএসসিতে ধুলা ছিল, সেটি আমাদের জায়গা নয়। খাবারের বিষয়ে বলতে পারি, কোনো অব্যবস্থাপনা থাকলে সেটি বইমেলার সঙ্গে সংযুক্ত নয়। বইমেলায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এ ছাড়া শিশুচত্বরও অনেক প্রশংসিত হয়েছে। আমার মনে হয়, দু-একটি সিদ্ধান্ত ছাড়া আরও কোনো সমস্যা হয়নি। সার্বিকভাবে মেলার আয়োজন সুন্দর ছিল।

নতুন বই এসেছে ১৫৫টি :

গতকাল মেলার ২৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৫৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই ৬৮টি। গল্পের বই ১০টি, ২৭টি উপন্যাস, ১৫টি প্রবন্ধ, জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ৩টি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই দুটি, ছড়া ও অনুবাদ দুটি। এ ছাড়া গবেষণামূলক, শিশুসাহিত্য, নাটক, ভ্রমণ, ইতিহাস, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানবিষয়ক বই একটি করে এবং অন্যান্য বই এসেছে ১৬টি।

বইমেলার অনুষ্ঠান :

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় সাহিত্যের বৈভব ও জেলা সাহিত্যমেলা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশনেন মুন্সি আবু সাইফ, সাহেদ মন্তাজ এবং মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সোহেল আমিন বাবু, হরষিত বালা, আসাদুজ্জামান আসাদ, মাহফুজা অনন্যা এবং মোহাম্মদ আলমগীর আলম।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মালেক মাহমুদ, সালাউদ্দিন বাদল, শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক এবং আলমগীর আলম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ম. ম. জুয়েল, সাফিয়া খন্দকার রেখা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, শামস মিঠু এবং ফারজানা ইসলাম। এ ছাড়া ছিল দিলরুবা খানমের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘শব্দনোঙর’, ফরিদা পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অচিন পাখি’, অনিকেত আচার্যের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’, ড. শামীম মতিন চৌধুরীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বিউটিফুল মাইন্ড’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া, ফেরদৌস আরা, জেরিন তাবাসসুম হক, নয়ন বাউল, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি এবং আমজাদ দেওয়ান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন কাজী ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কি-বোর্ড), মো. আতিকুল ইসলাম (বাঁশি) শেখ জালালউদ্দিন (দোতারা) এবং মো. হাসান মিয়া (বাংলা ঢোল)।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াতের তিন নেতা গ্রেপ্তার 

সাগ্রাইয়ের শেষ দিনে মৈত্রী পানি উৎসব

ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে বিল দখলের চেষ্টা, কর্মী গুলিবিদ্ধ

শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর শোক

আগের ম্যাচে খরুচে বোলিংয়ের পরও একাদশে মোস্তাফিজ 

অসুস্থ নেতার পাশে মহানগর বিএনপি

ট্রাফিক সদস্যদের বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন দিচ্ছে ডিএমপি কমিশনার

চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

নির্বাচন করবেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী, আলোচনায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বাড়ি

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পথে আইসিসি

১০

মরা মুরগির ঘিলা-কলিজা বিক্রি করেই কোটিপতি সুজন

১১

চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনে ঝুলছিল নারীর মরদেহ

১২

‘মধ্যপ্রাচ্যে শেখ হাসিনার মতো নেত্রী থাকলে গাজায় এমন পরিস্থিতি হতো না’

১৩

সাইকেল হয়ে গেল মোটরসাইকেল!

১৪

বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা চালু করল রাকাব

১৫

রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় নিহত ৩

১৬

শহরে কৃষক লীগের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না : কাদের 

১৭

মার্কিন মুলুকে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঙ্কার

১৮

বান্দরবানের সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি

১৯

পাবনা কারাগারে কয়েদির মৃত্যু

২০
*/ ?>
X