
রাজধানীর উত্তরা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় উদ্ধার টাকা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর এবার মামলার জব্দ তালিকাতেও টাকার হেরফের দেখা গেছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং আদালত। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ জব্দ তালিকা তৈরির জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে তিরস্কারও করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম শান্ত ইসলাম মল্লিক। এখানেও অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন ভুল বোঝাবুঝি।
আদালত সূত্র বলছে, তদন্ত কর্মকর্তা একটি জব্দ তালিকা জমা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার দেখান। যদিও মুখে বলেছেন, উদ্ধার হয়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন, উদ্ধার হলো ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি।
আপনি জব্দ তালিকা করে এনেছেন ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। বাকি টাকা কোথায়?
তদন্ত কর্মকর্তা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে অবশ্য প্রথমে উদ্ধার করা ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার জব্দ তালিকাসহ মোট ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধারের বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন আদালতকে।
গত রোববার গ্রেপ্তারকৃত আট ডাকাতকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নিতে গিয়ে আদালতে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সাজু মিয়ার সঙ্গে এসব কথোপকথন হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট ডাকাতের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ঠিক এখানেও এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কারণ, মামলাটা প্রথমে ছিল তুরাগ থানায়। পরে আসে ডিবিতে। মনে করা হয়েছিল, প্রথম উদ্ধারের টাকা তারা জব্দ তালিকা জমা দিয়েছেন। পরে মোট টাকার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তুরাগ এলাকায় বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি মাইক্রোবাস আটকে চার ট্রাঙ্ক টাকা নিয়ে যায় একদল ডাকাত।
ওই ট্রাঙ্কগুলোতে ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল বলে মানি প্লান্টের তরফ থেকে সেদিন জানানো হয়। সেদিন দুপুর থেকে বিকেলে খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধার করা হয়, সেখানে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল।
অন্যদিকে ঢাকায় ডাচ্বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা লুটে জড়িত অভিযোগে খুলনা নগরে দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এ সময় কিছু উদ্ধার হয়েছে, তা জানানো হয়নি। নগরীর সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে এ অভিযান চালানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক। আসামিদের মধ্যে আকাশ নামে এক ব্যক্তি রয়েছে। এ নিয়ে ডাচ্বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় ১১ জনকে আটক করা হলো।
এর আগে শনিবার রাতে ঢাকা-সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটক এবং মোট ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি, রাতের মধ্যে ভালো সংবাদ দিতে পারব।