রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজপথেই দাবি আদায়ের তাগিদ জনপ্রতিনিধিদের

রাজপথেই দাবি আদায়ের তাগিদ জনপ্রতিনিধিদের

বিএনপিকে সরকারের কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে রাজপথেই দাবি আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। এ লক্ষ্যে ঢাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করে ঈদুল ফিতরের পরই আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সেই আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। কোনো ক্রমেই রাজপথ ছাড়া যাবে না। বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দল সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানরা এসব পরামর্শ ও প্রস্তাবনা দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে। কারণ, তারা তৃণমূলের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি। আন্দোলন নিয়ে তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে আগামীতে দলের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচিই দেওয়া হোক, তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করছেন। তিনি আরও বলেন, এই মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে দলের তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের বন্ধন আরও মজবুত হচ্ছে, যা আগামীতে আন্দোলন সফলে সহায়ক হবে।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। দাবি না মানলে আগামীতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নামবে দলটি। সেই আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে নামাতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে রাগ-ক্ষোভ এবং অভিমানে দীর্ঘদিন ধরে দূরে কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীদের এক ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এ প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি সাবেক ছাত্রনেতাদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের ৪ হাজার জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে আড়াই হাজারের বেশি সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগের ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগ, ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট ও খুলনা বিভাগ (দুই জেলা), ১ মার্চ বরিশাল বিভাগ এবং ২ মার্চ ঢাকা বিভাগের ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপি। ওই পাঁচ মতবিনিময় সভায় ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান ৯৬৩ জন চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১৬৩ জন বক্তব্য রাখেন।

সভায় তৃণমূলে মামলা-হামলা-গ্রেপ্তার ও হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরে তারা বলেন, তৃণমূল সার্বিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত। আর বসে থাকার সময় নেই। সরকার হটাতে এখন চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে হবে। তবে তার আগে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল যেখানে কমিটি আহ্বায়ক, দুর্বল কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে তা ভেঙে দিয়ে রাজপথের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেন, জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে। তারা এবং দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলে এই সরকার টিকতে পারবে না।

বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি বিএনপিকে অতীতের অভিজ্ঞতায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় শুনি, আগামীতে একটা সমঝোতার নির্বাচন হবে, যেখানে বিএনপিকে ৭০/৮০ সিট দেওয়া হবে। তখন দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করা হয়, এমন কোনো সম্ভাবনাই নেই। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সমঝোতা কিংবা আসন ভাগাভাগির নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে যাবে, তবে সেই নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে।

পাঁচটি মতবিনিময় সভার প্রায় প্রতিটিতেই অতীতের অভিজ্ঞতায় আন্দোলন সফলে ঢাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। বিএনপির হাইকমান্ডের উদ্দেশে তারা বলেন, আপনারা ঢাকা অচল করে দিতে পারলে অতীতের মতো আগামীতেও আমরা তৃণমূল অচল করে দেব। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকায় সংগঠন এখন অনেক শক্তিশালী। আরও শক্তিশালী করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে।

মতবিনিময় সভায় বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান আগামীতে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এমন নেতাদের এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, মাঠে ও নেতাকর্মীদের পাশে থাকবে না এমন কাউকে দল থেকে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে সিলেট, খুলনা ও বরিশাল জেলার কয়েকজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। প্রায় সবাই এখন চূড়ান্ত আন্দোলন চান। তারা বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডকে কোরবানির ঈদের আগেই কঠোর আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছেন। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আপনারা সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, মান-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন, তৃণমূলে জনগণকে সংগঠিত করুন, যথাসময়ে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি আসবে।

আগামীকাল থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাকি পাঁচ সাংগঠনিক বিভাগের দল সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে মতবিনিময় করবে বিএনপি। তারপর তাদের দেওয়া মতামত-পরামর্শগুলো পর্যালোচনা করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কৌশল ঠিক করবে দলটি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান

বাকেরগঞ্জে অনুমোদন বিহীন দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি

টিসিবির পণ্যের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শালিকে কোপাল দুলাভাই 

৯ মাসেই রির্জাভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

চাঁদপুরে ২ শ্রমিককে ইট ভাটায় আটকে রাখার অভিযোগ

অপরাধী শনাক্ত করবে সিসি ক্যামেরা

ই-সিগারেট / নতুন মোড়কে পুরনো সর্বনাশ

নন্দীগ্রামে প্রেসক্লাবের তুহিন সভাপতি, হানিফ সম্পাদক

১০

মসজিদে নামাজের সময় এসি বিস্ফোরণ

১১

সপ্তাহের ব্যবধানে একই এলাকায় আবারও খুন

১২

বদরের শিক্ষায় ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে : সেলিম উদ্দিন

১৩

মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই সাপ

১৪

‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন’

১৫

‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কারের যে প্রমাণ দিল ইউনূস সেন্টার

১৬

মেহেদির রং শুকানোর আগে প্রাণ গেল যুবকের

১৭

আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি (২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার)

১৮

পশ্চিমাদের যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ভূপাতিত করার হুমকি পুতিনের

১৯

হাজার কোটি টাকার মালিক বাবা, কিছুই জানে না ছেলে

২০
*/ ?>
X