একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছিলেন পটিয়ার আছিয়া বেগম। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার সেই আত্মত্যাগের সরকারি স্বীকৃতি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৭ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আছিয়া বেগমকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করে ২০১৮ সালে। এরপর থেকে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন। তবে জীবনসায়াহ্নে তার একটাই চাওয়া—বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ। একান্তে প্রধানমন্ত্রীকে মনের কিছু কথা বলতে চান তিনি।
৭২ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আছিয়া বেগম বর্তমানে হাঁটাচলা করতে পারেন না। চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর নয়াবাজারে ভাইয়ের বাসায় দিন কাটে বই পড়ে।
স্বজনরা জানান, সত্তরের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে আছিয়া বেগম আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য একাত্তরের ১৬ এপ্রিল আরও অনেকের সঙ্গে একমাত্র নারী হিসেবে তাকে সেদিন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামি করা হয়। ১৯৭১ সালের ১ জুন তার জীবনের কালরাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সেদিন হানাদার বাহিনী তার কচুয়াইর বাড়িতে হানা দেয়। তিনি লুকিয়ে পড়েন। কিন্তু হায়েনারা যখন তার বাবাকে মারতে উদ্যত হয়, তখন আর লুকিয়ে থাকতে পারেননি। বাবাকে বাঁচাতে অস্ত্রের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই সময় তাকে অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হায়েনারা। সেই আঘাতে তিনি চিরজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন।
আছিয়া বেগম স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর যখন সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়, তখন আমি পটিয়া কলেজের ডিগ্রি পরীক্ষার্থী। সেই সময়ে পটিয়া ও কলেজ সংগ্রাম কমিটির মহিলা সম্পাদিকার দায়িত্ব পাই। শিক্ষক রণজিত কানুনগো, আবদুর রশিদ মাস্টার, চিত্তরঞ্জন সেনের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে মেজর সিরাজুল ইসলাম খালেদ, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী, হামিদুর রহমান, অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ, অধ্যাপক ফজলুল করিম চৌধুরী, আবু ছালেহ, কমরেড শাহ আলম ও ফণী ভূষণ দাশের সঙ্গে আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেই।’
আছিয়া জানান, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তিনি এজেন্ট ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল কচুয়াই ইউনিয়ন শান্তিবাহিনীর চেয়ারম্যান আহমদ কবির স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৩৬ জন নেতাকে আসামি করে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা করেন। সেখানে আছিয়া একমাত্র নারী আসামি ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর অবহেলায় দিন কেটেছে। কেউ খবর পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। একমাত্র জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমাকে স্বীকৃতি দিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে মৃত্যুর আগে সাক্ষাৎ করতে চাই। সামনে থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, তিনি জানলে আমার এ চাওয়া অপূর্ণ থাকবে না। সেই আশায় দিন গুনছি।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল মামুন বলেন, ‘তার নামে বরাদ্দকৃত বীর নিবাসের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।’
পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার নারী মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা আছিয়া বেগম দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমাদের গর্ব। তাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে।’