
জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজশাহী সিটি (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. সাহিদ হাসান। দলটির অন্য কোনো প্রার্থীও এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও আলাদা প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে না। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আবারও ‘ফাঁকা মাঠেই গোল’ দিচ্ছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা
দেওয়ার শেষ দিন ২৩ মে। এ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী লিটন বাদে মাত্র দুটি রাজনৈতিক দল থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। যদিও তারা কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। বিএনপি নেতা সাহিদ হাসান নির্বাচন করবেন বলে জল ঘোলা করলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
মো. সাহিদ হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি গণমাধ্যমে বলেছিলাম, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে আমি প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ভাবব। বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা সিটি নির্বাচন নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি মনে করি, আসন্ন রাসিক নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে না। নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে এসেছি।’
মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, দলটির বর্তমান বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। আমরা দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
বিএনপির এই দুই নেতার বক্তব্যে আসন্ন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে মেয়র পদে কেউ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এটি পরিষ্কার।
তবে ভোটের মাঠে থাকছে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জাতীয় পার্টির মহানগরীর আহ্বায়ক ও লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছি। ২১ মে (আজ) মনোনয়নপত্র জমা দেব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ওই রকম প্রার্থী নই যে, মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। আমি অবশ্যই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম খান বলেন, ‘এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমাদানের জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করেছি। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেব। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্য ইসলামী দলগুলোও আমাকে ভোট দেবে। সেই বিবেচনায় মেয়র পদে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি গত নির্বাচনেও মনোনয়নপত্র উত্তোলন করে তা আর জমা দেয়নি। রাজশাহীতে জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংকও সেভাবে নেই। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গেল নির্বাচনে মাত্র ৩ হাজার ৩০০ ভোট পেয়েছিলেন। যেখানে আসন্ন নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি। এখানে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে লিটন এবারও ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দিচ্ছেন এটা নিশ্চিত। কেননা, রাজশাহীতে জাতীয় পার্টি কিংবা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোটার নেই। আর এই দুই দল থেকে যারা মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন, তাদের নগরবাসী চেনেন না। যেহেতু বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না; সেহেতু আমি বলব, এটি অংশগ্রহণমূলক কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।’
মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বিএনপি হারার ভয়ে আসন্ন সিটি নির্বাচনে আসছে না। আমরা এখনো বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা ফাঁকা মাঠে নয়, খেলেই জয়ী হতে চাই। কেননা, গত পাঁচ বছরে যেভাবে রাজশাহীর উন্নয়ন করেছি, মানুষের সেবা করেছি, তাতে বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক; নগরবাসী আমাকে আবারও নির্বাচিত করবেন। সেই বিশ্বাস শহরের মানুষের প্রতি আমার আছে।’