খুলনা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ জুন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সদ্যবিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. আব্দুল আউয়াল ও জাতীয় পার্টি মনোনীত এসএম শফিকুল ইসলাম মধু। এ তিন প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন সদ্যবিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বার্ষিক আয়ে এসএম শফিকুল ইসলাম মধু। তবে এ দুই প্রার্থীর চেয়ে আয় ও সম্পদে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষায় এগিয়ে আছেন মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল।
খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এ প্রার্থীর হলফনামার বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
আব্দুল আউয়ালের হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত এ প্রার্থী কামিল পাস। তিনি পেশা হিসেবে লিখেছেন জামি’আ রশিদিয়া গোয়ালখালী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ী। আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২১০ টাকা ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ, যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমি। তার নামে কোনো মামলা নেই।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের হলফনামায় দেখা গেছে, তিনি বিএ পাস। পেশা উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। তবে ব্যবসা থেকে আয় নেই তার। বছরে কৃষি খাত থেকে তার আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর ব্যাংক সুদ থেকে আয় ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া মেয়র পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া
থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা, স্ত্রী উপমন্ত্রীর পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। তালুকদার খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে তার।
এ ছাড়া দুটি গাড়ির মালিক তিনি, এর মধ্যে লেক্সাসের দাম দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ টাকা এবং মাইক্রোর দাম দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৭ লাখ টাকা।
তার স্ত্রী পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। তিনি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেন। তার দাম ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক।
এ ছাড়া তিনি ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অকৃষিজমির মালিক। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রীর নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। জমিসহ অর্ধেক বাড়ির মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া জমিসহ পাঁচতলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল রোড শাখায় তালুকদার খালেক ও স্ত্রীর নামে ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রার্থী তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে আগে ৯টি মামলা ছিল। এর মধ্যে চারটিতে অব্যাহতি ও পাঁচটিতে খালাস পান তিনি।
আরেক মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তিনি সশিক্ষিত। পেশা হিসেবে সরকারি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার উল্লেখ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স মধু ট্রেডার্স। আয়ে তিন প্রার্থীর মধ্যে শীর্ষে তিনি। বছরে তার আয় ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাড়িভাড়া থেকে আয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৩ ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৮৭ টাকা। শফিকুল ইসলাম মধুর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংকের খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর, একটি গাড়ি, যার মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা।
তিনি হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় চার কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি। টুটপাড়া মৌজায় ০.১৩৭২ ও ০.১২৪৪ একরের দুটি জমি, যেগুলোর মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণেও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। মধুমতি ব্যাংক খুলনা শাখায় তার ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।