রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদারবাড়ি জামে মসজিদে দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর ধরে ইমামতি করে আসছিলেন আব্দুর রহমান। সেই সূত্রেই ওই এলাকার ভাড়াটিয়া আজহারুলের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিজের ছেলেকে নিয়ে ইমামের কাছে আরবি পড়তে যেতেন পোশাক শ্রমিক আজহারুল। সুযোগ পেলে ঈমাম আব্দুর রহমানও চলে আসতেন আজহারুলের বাসায়। একপর্যায়ে আজহারুলের স্ত্রী আসমার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আব্দুর রহমান। আর সেই পরকীয়া প্রেমের বলি হন আজহারুল। তাকে মসজিদে খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে ডেকে হত্যা শেষে লাশ সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেন আব্দুর রহমান। এর আগে প্রথম দফার হত্যাচেষ্টায় আজহারুলকে খাওয়ানো হয় টিকটিকি ও জামালগোটা ফল। তবে সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান ভুক্তভোগী।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ফারুক মিয়া আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে মসজিদের ইমাম মো. আব্দুর রহমান ও আজহারুলের স্ত্রী আসমা আক্তারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৬ মে ভুক্তভোগীর ভাই হাসান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এ মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
চার্জশিট অনুযায়ী, আজহারুলের ছেলে মসজিদের সামনে খেলা করতে এলে তাকে চকলেট দিতেন আব্দুর রহমান। ছেলেটি খেলা করতে গিয়ে একবার আঘাত পায়। পরে তাকে দেখতে কয়েকবার আজহারুলের বাড়িতে যান আব্দুর রহমান। সেই সুবাদে আজহারুলের স্ত্রী আসমার সঙ্গে আব্দুর রহমানের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আব্দুর রহমানের কাছে ভুক্তভোগী আজহারুল ও তার ছেলে আরবি পড়া শুরু করেন। আরবি পড়ানোকে কেন্দ্র করে প্রায়ই আব্দুর রহমান তাদের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। একদিন আজহারুল অফিস
থেকে ফিরে ইমাম আব্দুর রহমান ও স্ত্রী আসমাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেন। পরে আজহারুল তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন। এর পরই আজহারুলকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করেন আব্দুর রহমান ও আসমা।
প্রথম দফায় খাওয়ানো হয় টিকটিকি ও জামালগোটা
পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্দুর রহমান ৪টি টিকটিকি ও কিছু জামালগোটা ফল দিয়ে ভর্তার মতো করে আসমার কাছে দিয়ে আসেন। সেসব মিশিয়ে রাতে স্বামীকে খেতে দেন আসমা। পরে আজহারুলের পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়। অযত্ন-অবহেলায় ২-৩ দিন বাসায় পড়ে থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আজহারুল। একপর্যায়ে প্রতিবেশী ও স্বজনদের চাপে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান আসমা। সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান আজহারুল। পরে আজহারুল ও তার স্ত্রী ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যান।
খাওয়ানোর দাওয়াত দিয়ে হত্যা করা হয়
ছুটি শেষে ২০২১ সালের ১৮ মে আজহারুল তার স্ত্রী ও সন্তানকে রেখে একাই ঢাকায় আসেন। এরপর আজহারুলকে তাড়াতাড়ি হত্যা করার ব্যবস্থা করতে বলেন আসমা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২০ মে আসামি রহমান ভুক্তভোগী আজহারুলকে মসজিদে খাওয়ার দাওয়াত দেন। আজহারুল নামাজ শেষে মসজিদের দোতলায় আসামি আব্দুর রহমানের রুমে যান। সেখানেই একপর্যায়ে আজহারুলকে খুন করা হয়। পরে তিনটি বস্তায় লাশের ছয়টি খণ্ড ভরে মসজিদের সেফটি ট্যাংকির ভেতরে ফেলে দেন আব্দুর রহমান।