ভ্যাটের টাকা সরকারকে দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা

ভ্যাটের টাকা সরকারকে দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা
ছেবি : সংগৃহীত

গ্রাহকের কাছ থেকে মূল্য সংযোজন কর আদায় করলেও সেই টাকা নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে ভ্যাট থেকে আসা ৭৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে গ্যাস আমদানিতে। আর্থিক সংকটের কারণে আমদানিতে ভ্যাটের টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে এনবিআরকে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোবাংলা ২০০৯ সাল থেকে আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ও গ্রাহক থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারের কোষাগারে বা এনবিআরে জমা দিচ্ছে না। এতে প্রতিবছর ভ্যাট বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। পেট্রোবাংলা ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ভ্যাট দেয় না। আলোচ্য সময়ে এনবিআরের এলটিইউ ভ্যাটের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার সাপোর্ট ফর শর্টফল সংশ্লিষ্ট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত রেয়াত বাতিল সংশ্লিষ্ট বকেয়া ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পেট্রোবাংলার ভ্যাট বকেয়ার পরিমাণ ২২ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, করোনাকালে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট বাবদ ৭৮৩ কোটি আদায় করে। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে গ্যাস আমদানিতে ব্যয় করেছে। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের বকেয়া আদায় সংক্রান্ত একটি বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন খোদ পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা জানান, এনবিআরের ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে জ্বালানি বিভাগের কাছে ভর্তুকি বা অর্থ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় বিশাল পরিমাণের এই ভ্যাট পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পেট্রোবাংলার সদ্য যোগদান করা চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার এ বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব। ফলে উভয় প্রতিষ্ঠান আলোচনা করে সমাধান করবে। তবে পেট্রোবাংলার যেহেতু তহবিল সংকট রয়েছে, তাতে ভ্যাটের টাকা আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যবহার হতে পারে।

এলটিইউতে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া ভ্যাটের টাকা আদায় করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলটিইউ ভ্যাট। বৈঠকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ থেকে পাওয়া সম্পূর্ণ অর্থের ওপর ভ্যাট আইন ও সম্পূরক শুল্ক আইন অনুযায়ী যথাযথ ভ্যাট আদায় ও সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই-২০০৯ থেকে জুন-২০১৭ পর্যন্ত সময়ে এনবিআরের নিরঙ্কুশ বকেয়া ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বুক এডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তু নেয়া হয়েছে। আর অবিশিষ্ট নিরঙ্কুশ বকেয়া ৫ হাজার ৮১০ কোটি টাকা পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে পেট্রোবাংলার সঙ্গে করা সর্বশেষ বৈঠকেও।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল এবং জ্বালানি গবেষণা তহবিলকে ভ্যাট আইনের বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সেই হিসেবে বিগত দিনে গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাটসহ সমুদয় মূল্য ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই হিসেবে ভ্যাট আরোপিত হবে। সেইসঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহক থেকে আদায় করা অর্থ যেহেতু ভ্যাটের টাকা, সেই হিসেবে এই তিন প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের টাকা জমা দিতে হবে এনবিআরকে।

এ বিষয়ে চাইলে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের কমিশনার ফারজানা আফরোজ বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে সরকারের হিসাবে জমা না দিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করা আইনানুগ নয়। তাই দ্রুত বকেয়া অর্থ জমা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com