আমজাদ হোসেন শিমুল ও আব্দুস সবুর লোটাস, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাবিতে সংঘর্ষে ভিসি ও ছাত্র উপদেষ্টা দায়ী

রাবিতে সংঘর্ষে ভিসি ও ছাত্র উপদেষ্টা দায়ী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সংঘর্ষের ঘটনা উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূরের কারণেই ঘটেছে বলে অভিযোগ ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট অনেকের। বাসচালক ও সহকারীর সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ঝামেলা সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দেন ভিসি নিজেই। পরবর্তী সময়ে ছাত্র উপদেষ্টার নির্দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত শনিবার বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে রাবি শিক্ষার্থী, বাসচালক ও সহকারীর দ্বন্দ্বের ঘটনার সমাধানে মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন উপাচার্য। ওই নির্দেশ পেয়েই কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান কিবরিয়া। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করলে সাত-আটটি মোটরসাইকেল রেখেই ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয়রা। বেশ কিছুক্ষণ পর ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর ঘটনাস্থলে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ওই সময় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমাদ উপদেষ্টাকে দেরিতে আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন এবং গালাগাল করতে তেড়ে যান। এ বিষয়ে ওই ছাত্রনেতা বলেন, সেদিন ওই পরিস্থিতিতে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। অন্যদিকে ঘটনা প্রসঙ্গে তারেক নূর বলেন, ইমতিয়াজ আমাকে বারবার কল দিয়ে পাচ্ছিল না কেন, সেটিই জিজ্ঞেস করছিল।

তবে, প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, ওই তর্কের পর ছাত্র উপদেষ্টার নির্দেশেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিনোদপুর বাজারের দিকে যায় ছাত্রলীগ। তখন ইটপাটকেল, পাথর, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আবারও হামলা চালান স্থানীয়রা। ছাত্রলীগও পাল্টা আক্রমণ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় ছাত্র উপদেষ্টা ঘটনাস্থলের পাশেই নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার ভূমিকাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে প্রক্টরের রুমে বসে মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে এসেছি। এখন যারা আছে, তারা বহিরাগত। তাদের যে কোনোভাবে সরিয়ে দেওয়া হোক।’ এর পরই ঘটনাস্থলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, শটগান ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

এদিকে, উপাচার্য মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন খোদ ছাত্রলীগ সভাপতি। বলেন, ভিসি স্যারের ফোন পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয়রাই প্রথমে চড়াও হন।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আশঙ্কায় ছাত্রলীগ সভাপতিসহ অন্যদের বিনোদপুরের দিকে যেতে নিষেধ করি। কিন্তু স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে আরও নেতাকর্মী জড়ো করলে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, ‘আমি ভেতরে থাকায় ছাত্র উপদেষ্টার ভূমিকা সরাসরি দেখতে পারিনি।’

এসব বিষয়ে জানতে উপাচার্যের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। পরে প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন রাজশাহীতে ছিলাম না। সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান দায়িত্বে ছিলেন।

স্বাভাবিক হচ্ছে রাবি সংঘর্ষের তিন দিন পর আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা তাদের চলমান আন্দোলন স্থগিতের পাশাপাশি ১৪ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষা। ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে শিক্ষার্থীদের ভয়ও কাটতে শুরু করেছে।

ওই সংঘর্ষে আহত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান মিহাদ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রামেক)-এর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি। এ ছাড়া গুরুতর আহত মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আলিমুল ইসলাম, আইন বিভাগের শেষ বর্ষের মো. আল-আমিন ইসলাম ও ফারসি বিভাগের শেষ বর্ষের মিসবাহুল গত ১৩ মার্চ থেকে ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে, মাথায় গুলি লাগার কারণে আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী স্মারক মাহমুদকে ঢাকা মেডিকে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মহসিনুল হক সৌরভ বলেন, মঙ্গলবার ক্লাস হয়নি তবে বুধবার রুটিন অনুযায়ী সব ক্লাস হয়েছে।

সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দিলবর হোসেন বলেন, হামলার ঘটনায় দুদিন ইনকোর্স পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম তানজানা বলেন, আহত সহপাঠীদের জন্য কষ্ট লাগলেও ক্লাস করছি।

বিনোদপুর এলাকার ছাত্রীনিবাসে থাকা নাসরিন আক্তার বলেন, ঘটনার পর আমাদের মেস থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। তবে সে শঙ্কা এখন কিছুটা কেটেছে।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, রাবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহনের পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে চারজনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এজন্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে গেছেন শিক্ষার্থীরা।

জেলার মেস মালিক সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমান কালবেলাকে বলেন, যাতে কারও কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যার মধ্যে সব মেস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলাম। এদিকে, বিনোদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রুত ব্যবসা শুরু করতে পারেন সেজন্য চেষ্টা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণ, মেস মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে কথা বলে শুরু থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানে বিমান চলাচল স্বাভাবিক

ঢাকাসহ তিন বিভাগে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় রিকশার যাত্রী নিহত

এবার সিরিয়া ও ইরাকেও হামলা

প্রমাণ করলেন কেন তাকে বলা হয় টাইব্রেকার স্পেশালিস্ট!

কেন ইরানের ইস্ফাহান শহরকে টার্গেট করল ইসরায়েল?

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

ইরানে বড় শহরগুলোতে বিমান চলাচল বন্ধ

হামলা চালাতে যাওয়া সব ইসরায়েলি ড্রোন গুঁড়িয়ে দিল ইরান

১২ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

১০

অটোভ্যান ছিনতাই করে চালককে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

১১

ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল

১২

৩১ জেলায় আবহাওয়া নিয়ে দুঃসংবাদ

১৩

ছুটির দিনটি কেমন যাবে আপনার?

১৪

সিনেমা হলের জায়গা বিক্রি, নির্মাণ হবে মাদরাসা

১৫

ভারতে লোকসভার ভোট শুরু আজ

১৬

পাবনায় চিনিবোঝাই ১২ ট্রাকসহ আটক ২৩

১৭

তীব্র গরমে ছয় বিভাগে স্বস্তির খবর

১৮

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১৯

১৯ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

২০
*/ ?>
X