প্রধান শিক্ষককে থাপ্পড় মারা সভাপতির খুঁটির জোর এমপি!

ঝিনাইদহ।
ঝিনাইদহ।

পরিচালনা কমিটির খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে থাপ্পড় মারেন ওই প্রতিষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি শাহিদুল ইসলাম। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের অনুসারী হওয়ায় সভাপতির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের মামলা নেয়নি শৈলকুপা থানা। বরং সাধারণ ডায়েরি হিসেবে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য কোর্টে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ঘটনার তিন দিন পর একই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শাহিদুল ইসলাম।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শাহিদুল ইসলামের দম্ভোক্তি, কেউ তার কিছু করতে পারবে না। কারণ স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই তাকে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি বানিয়েছেন। তিনি প্রায়ই এ ধরনের মন্তব্য করে থাকেন বলেও জানা গেছে। গতকাল বুধবার সরেজমিন বিদ্যালয়ে

এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে দেখা যায়। প্রধান শিক্ষক, অন্য শিক্ষক-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে প্রতিদিনের মতো এলেও তাদের মধ্যে ছিল না কোনো প্রাণচাঞ্চল্য। এ সময় প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার গায়ে হাত তুলেছেন সভাপতি। এ ঘটনায় তিনি ওইদিন মামলা করতে গেলেও তার মামলা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে স্কুলে আসাটাকে নিরাপদ মনে করছেন না তিনি। তার আশঙ্কা, যে কোনো মুহূর্তে তার ওপর ফের হামলা হতে পারে।

এদিকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার ঘটনার চার দিন পার হলেও এর কোনো বিচার হয়নি। তাদের অভিযোগ, দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির কোনো নির্বাচন হয় না। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তিনি বিদ্যালয়ে এসে বলেন, এমপি আব্দুল হাই তাকে সভাপতি বানিয়েছেন। আর যতদিন আব্দুল হাই এমপি আছেন, ততদিন আমিও সভাপতি থাকব, কেউ কিছু করতে পারবে না।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা সভাপতির বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলোর সবই সঠিক। আড়াই বছর ধরে বিদ্যালয়ে অ্যাডহক (আহ্বায়ক) কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সভাপতি শাহিদুল ইসলাম সব সময় বলেন, যতদিন এমপি আব্দুল হাই রয়েছেন, ততদিন এ বিদ্যালয়ের এই অ্যাডহক কমিটিই থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে শাহিদুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আলাদা আলাদা অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেব।

গত ১৮ মে দুপুরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ নিয়ে আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চড় মারেন প্রতিষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তবে চড় মারার অভিযোগটি অস্বীকার করেন সভাপতি শাহিদুল ইসলাম। পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি পরিচালনা কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তী সময়ে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে গঠন করা হয় ছয় মাস মেয়াদি অ্যাডহক কমিটি। তা দিয়েই চলছে পরিচালনা কমিটির কাজ। তবে সেই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। এ কমিটির নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ নিয়েই প্রধান শিক্ষকের গালে থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com