করুণা নয়, ন্যায্য হিস্যা চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ও এডিবির অংশীদারত্বের ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ও এডিবির অংশীদারত্বের ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।ছবি : সংগৃহীত

উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কারও কাছে করুণা বা দয়া চাই না, আমরা ন্যায্য অধিকার চাই। বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যাই দাবি করছি। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়ন অংশীদারদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং উন্নত দেশগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা বেশিরভাগ প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন-অর্থায়নকে অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর করে তুলছে। তাই একাধিক অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বৈশ্বিক ব্যবসায়িক অংশীদাররা অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করছে, যা সার্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, আইসিটিভিত্তিক উদ্যোক্তা, মানসম্পন্ন অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কৌশলগত গুরুত্বারোপসহ অর্থায়নের নমনীয় পদ্ধতি এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জন্য এডিবির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। দুঃসময়ে এডিবি উদ্ভাবনী অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় এডিবি ২.২৯ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। আমি এ সহায়তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে এডিবির সহায়তা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে তাদের সহযোগিতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এডিবির ক্রমবর্ধমান অবদান দাঁড়িয়েছে ২৮.৩৮ বিলিয়ন ডলারে, যা এডিবির পোর্টফোলিওতে বাংলাদেশকে তৃতীয় বৃহত্তম গ্রাহক করে তুলেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে এডিবির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় ৫৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার অধীনে এডিবি অর্থায়নকৃত আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সংযোগ প্রকল্পগুলো অশুল্ক বাধা হ্রাস করে পণ্য ও পরিষেবায় আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান এবং বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং। পরে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার নেতৃত্বে ব্যাংকটির সফররত প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাতে এডিবির কাছ থেকে আরও সহায়তা চেয়েছেন।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অবকাঠামোর ওপর জোর দিচ্ছে। এ সময় তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে, প্রধানত, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাতে আরও সহায়তা কামনা করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি ও মিড-ডে মিল সম্পর্কিত কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা এডিবিকে এই ব্যাপারে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে এডিবির একজন সহসভাপতি বাছাই করারও আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, এডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবে। আগামী দিনগুলোতে আমাদের মধ্যকার এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশের ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষার যাত্রায় এডিবি পাশে দাঁড়াবে।

এর আগে, সকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার আলবুলুশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ওমানকে জ্বালানি সহযোগিতা জোরদার, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করার আহ্বান জানান। উপসাগরীয় দেশগুলোকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ প্রতিবছর ১৫ লাখ টন থেকে উন্নীত করতে বলেন।

রাষ্ট্রদূত আব্দুল গাফফার আলবুলুশি সরকার থেকে সরকার ব্যবস্থার অধীনে ওমান থেকে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। ওমানের ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে এ বিষয়ে একটি অনুরোধ পত্র পাঠানো হয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com