মোস্তাকিমকে মারধরের প্রমাণ পেল না সিআইডি

মোস্তাকিমকে মারধরের প্রমাণ পেল না সিআইডি

কিডনি ডায়ালাইসিসের বর্ধিত ফি কমানোর আন্দোলন থেকে আটক সৈয়দ মোহাম্মদ মুনতাকিম ওরফে মোস্তাকিমকে নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ জন্য অভিযুক্ত পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও এসআই আবদুল আজিজকে দায়মুক্তি দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে ৮০ দিন নিরুদ্দেশ থাকার পর গত রোববার থানায় ফিরেছেন ওসি নাজিম উদ্দিন ও দুই এসআই।

গত বৃহস্পতিবার আদালতে মোস্তাকিমের মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো) মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ। এ বিষয়ে তিনি কালবেলাকে বলেন, মামলার বাদী ও তার মাকে মারধরের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে মামলাটি তথ্যগত ভুল জানিয়ে ১১ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলা করেন মোস্তাকিম। মামলায় ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও একই থানার এসআই আবদুল আজিজকে আসামি করা হয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তভার পুলিশই পাওয়ায় যথাযথ তদন্ত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান। তিনি বলেন, মোস্তাকিমের ছেঁড়া পাঞ্জাবিও জব্দ করা হয়নি। তাকে নির্যাতনের বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি ভিডিও ফুটেজও আছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেওয়া হবে বলেও জানান এ আইনজীবী।

এদিকে ওই ঘটনার পর তদন্তের দায়িত্বে থাকা মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ আদালতে দেওয়া তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার বিবাদী পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও এসআই আব্দুল আজিজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। ৬ মার্চ নোটিশের বিপরীতে ফিরতি বার্তা আসে। এতে জানানো হয়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছুটিতে থাকা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এখনো কর্মস্থলে আসেননি। অন্যদিকে এসআই আব্দুল আজিজ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিশ্রামে গিয়ে কর্মস্থলে গরহাজির। এরপর ৮০ দিন নিরুদ্দেশ থাকার পর গত রোববার থানায় যোগ দিয়েছেন ওসি ও ২ এসআই। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পাঁচলাইশ থানার ওসি থানায় যোগদান করেছেন। আমি যোগদানপত্র পেয়েছি।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে স্যারের জড়িত থাকার কোনো সত্যতা পায়নি সিআইডি। তারা গতকাল (রোববার) থানায় যোগদান করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ মোস্তাকিম তার মাকে সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করান। চলতি বছরের শুরুতে ডায়ালাইসিসের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তিনিসহ রোগীর স্বজন মিলে আন্দোলন করেন। গত ১০ জানুয়ারি তারা হাসপাতালের প্রধান গেটে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন। পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে ওসি নাজিম মোস্তাকিমকে গ্রেফতার করে প্রথমে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিচে মারধর করেন। পরে থানায় তাকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়।

এ ঘটনায় তুমুল নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com