
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে মো. মৃধা আজমের। এই মৃত্যুতে গোটা পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে স্বজনরা মূর্ছা যাচ্ছিলেন বারবার। স্ত্রী রিয়া আক্তার মিমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নিজের অনাগত সন্তানকে দেখে যেতে পারলেন না আজম।
জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে রিয়া আক্তার মিমি অধিক শোকে যেন বাকরুদ্ধ। ছয় বছর বয়সী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যু হয় আজমের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৪-এ।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। শ্বাসনালিসহ শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত আজমের বাড়ি পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার গোশিংগা গ্রামে। স্ত্রী-মেয়ে নিয়ে মগবাজার নয়াটোলায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। সিদ্দিকবাজারের ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে দোকানে ২ বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছিলেন আজম।
বাবা রংমিস্ত্রি মো. শাহজাহান মৃধা ছেলের মৃত্যুতে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার পোলা শ্যাষ। আমার সবকিছু শ্যাষ। আমার পোলারে আমি আর ফেরত পামু না।’ তিনি জানান, ঘটনার সময় আজম দোকানেই ছিলেন। ঘটনার পরপরই টেলিভিশনে খবর দেখে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান তারা। সেখানেই আহত আজমকে খুঁজে পান। এর পর থেকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন আজম। ভাই মো. শহীদুল বলেন, ‘আজমের অবস্থা শুরু থেকেই খুব খারাপ ছিল। এর পরও মনে আশা ছিল, যদি বেঁচে ফিরে আসে; কিন্তু সবাইকে ছেড়ে চলেই গেল সে। তার স্ত্রী দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। আরেকটি সন্তান আসার খবরে সে ছিল খুব খুশি; কিন্তু সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না তার।’ বিস্ফোরণে আহত ১২ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আজম মৃধার আগে গত বুধবার রাতে মারা যান মো. মুসা। লাইফ সাপোর্টে থাকা ইয়াসিন আলীর মৃত্যু হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে।
এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দুজনের মধ্যে একজন লাইফ সাপোর্টে। মো. মোস্তফা ও কামাল শেখ নামে দুই ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে কারও কারও শ্বাসনালি পুড়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে। কাচসহ ছিটকে আসা বিভিন্ন পদার্থে শরীর কেটেছে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনো ২১ জন চিকিৎসাধীন। গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানের বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট নামে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুপাশে লাগোয়া দুই ভবনের কিছু অংশ।