হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:১১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বদলে যাচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থা

বদলে যাচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থা

বদলে যাচ্ছে দেশে জ্বালানি তেল পরিবহনের ধরন। সড়ক পথে ট্যাঙ্ক-লরি, নৌপথে অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কার এবং রেলপথে ওয়াগনের মাধ্যমে তেল পরিবহনের পরিবর্তে পাইপলাইনে তেল পরিবহনের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে জুন থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল গভীর সমুদ্রে থাকা তেলবাহী জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে স্থলভাগের সংরক্ষণাগারে (স্টোরেজ) পরিবহন ও মজুত করা হবে। যা আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজ থেকে অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কারে করে পরিবহন ও খালাস করা হতো। এর আগে গত ১৮ মার্চ ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল ডিজেল আমদানি শুরু হয়, যা আগে রেলের ওয়াগনের মাধ্যমে করা হতো।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেল পরিবহনের ধরন বদলানোর কারণে পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাত থেকে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিবহনের সময় ও সিস্টেম লস একেবারেই কমে যাবে। তারা বলেন, ধীরে ধীরে তেল পরিবহনের জন্য সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে পাইপলাইনের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া এ বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহন সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। আমরা আগে আমদানি করা তেল খালাস করতাম মাদার ভেসেল থেকে অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কারে করে। তখন খরচ ও সময় অনেক বেশি লাগত। এখন গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহন ও খালাস করা হবে।

বিপিসির এ পরিচালক জানান, গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল পরিবহন ও খালাস জুন থেকে শুরু হবে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত দুই ধরনের তেলই খালাস হবে। এতে অপারেশন্স লস কমে যাবে। পাশাপাশি পরিবহন ব্যয়ও কমবে।

জানা যায়, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমদানি করা অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এবং নিরাপদে খালাস করার জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নামে ২০১৫ সালে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালে ওই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু এরপর তিন দফা বাড়িয়ে এখন সে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১২৪ দশমিক ৩৯ কোটি টাকায়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় যথাক্রমে জুন ২০২২ এবং তারপরে জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সংশোধনে। এ প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।

গত বছর ২০২২ সালে সরকার ৫৫ লাখ ৬৪ হাজার ২৪০ টন পরিশোধিত ও ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৪ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর নাব্য কম থাকার জন্য সরাসরি মাদার অয়েল ট্যাঙ্কার থেকে তেল আনলোড করা যায় না। এজন্য এই ট্যাঙ্কারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে এবং ছোট লাইটার জাহাজ দিয়ে আমদানি করা তেল শোধনাগার পর্যন্ত পরিবহন করা হয়। এ পদ্ধতিতে এক লাখ টন ক্ষমতার একটি জাহাজ থেকে তেল আনলোড করতে প্রায় ১১ দিন সময় লাগে। আর এসপিএমের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় এই পরিমাণ তেল খালাসও পরিবহন করা যাবে। এতে বিপিসির ৮শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একইভাবে ভারত থেকে রেলের ওয়াগনের পরিবর্তে পাইপলাইনে ডিজেল আসার কারণে শতকোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এসপিএম প্রকল্পের আওতায় চায়না পেট্রোলিয়াম ব্যুরো মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত অফশোর এবং অনশোর মিলে মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে। এর মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার সাগরের তলদেশে পাইপলাইন এবং ৭৪ কিলোমিটার স্থলভাগের পাইপলাইন। বর্তমানে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকা থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম গভীর সমুদ্রে মুরিং পয়েন্টটি অবস্থিত। প্রকল্পের কাজ শেষে জুন থেকে যখন মাদার ভেসেল মুরিং পয়েন্টে আসবে, তখন পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারামছড়া স্টোরেজ ট্যাঙ্কে তেল পাম্প করা হবে। সেখান থেকে পরে তেল পাম্প করা হবে ইস্টার্ন রিফাইনারির শোধনাগারে।

এ জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী এলাকায় ৯০ একর জায়গার ওপর ছয়টি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ও পাম্প স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ছয়টি স্টোরেজ ট্যাঙ্কের তিনটিতে পরিশোধিত এবং অন্য তিনটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মজুত করা হবে। প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কারের ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার ঘনমিটার এবং অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কারের ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজার ঘনমিটার। ডাবল পাইপলাইনের একটি দিয়ে অপিরোশোধিত তেল এবং অন্য পাইপলাইন দিয়ে পরিশোধিত তেল সরবরাহ করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ২০ হাজার টন অপরিশোধিত এবং ২৮ ঘণ্টায় ৭০ হাজার টন পরিশোধিত ডিজেল খালাস করা যাবে।

এসপিএম প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) দুইটি অয়েল লাইটার ট্যাঙ্কার এমটি বাংলার সৌরভ ও এমটি বাংলার জ্যোতির আর প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি লাইটার ট্যাঙ্কারে করে জ্বালানি তেল পতেঙ্গায় অবস্থিত ডলফিন অয়েল জেটিতে আসত। সামনে এই জেটিরও কোনো প্রয়োজন হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

ইরানে বড় শহরগুলোতে বিমান চলাচল বন্ধ

হামলা চালাতে যাওয়া সব ইসরায়েলি ড্রোন গুঁড়িয়ে দিল ইরান

১২ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

অটোভ্যান ছিনতাই করে চালককে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল

৩১ জেলায় আবহাওয়া নিয়ে দুঃসংবাদ

ছুটির দিনটি কেমন যাবে আপনার?

সিনেমা হলের জায়গা বিক্রি, নির্মাণ হবে মাদরাসা

ভারতে লোকসভার ভোট শুরু আজ

১০

পাবনায় চিনিবোঝাই ১২ ট্রাকসহ আটক ২৩

১১

তীব্র গরমে ছয় বিভাগে স্বস্তির খবর

১২

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১৩

১৯ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

১৪

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ যেসব আমল

১৫

শুক্রবার ঢাকার যেসব এলাকায় যাবেন না

১৬

ছাত্রলীগ নেতার পা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলেন এমপি

১৭

দাজ্জালের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো যে সাহাবির

১৮

লোহাগড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ / কুপিয়ে জখম ৩

১৯

চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারি

২০
*/ ?>
X