
তখন ভরদুপুর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের লাশকাটা ঘরের সামনে ব্যস্ত মর্গকর্মী (ডোম)। পেছন থেকে একজন বলে উঠল, ‘দেখেন তো এখানে আমার ভাই আছে কি না’। আগন্তুকের নাম সুমন মাহমুদ। হাতে বড় ভাই সোহেল মাহমুদের ছবি।
সুমন জানান, কয়েক মাস আগেই দেশে ফেরেন আফ্রিকা প্রবাসী বড় ভাই। কিন্তু গত ৮ মে থেকে নিখোঁজ চল্লিশোর্ধ্ব সোহেল। খবর নেওয়া হয়েছে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের বাসায়ও। কিন্তু কোথাও যাননি তিনি। ঢাকার সব হাসপাতাল ও থানায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। শেষ ভরসা হিসেবে খুঁজতে এসেছেন মর্গে। এখানে এসেও হতাশ হতে হয়েছে ছোট ভাই সুমনকে। মর্গ সহকারীর দেখানো সাম্প্রতিক সময়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের ১৫ থেকে ২০টি লাশের ছবির মধ্যে তার বড় ভাই নেই।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ঋষিকেশ দাস রোডের ১৩১ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সোহেল মাহমুদ। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় এখনো বিয়ে করেননি। নিখোঁজের ঘটনায় গত ১১ মে সূত্রাপুর থানায় জিডি করেন মা মিনু বেগম। কিন্তু এক মাসের বেশি হলেও পুলিশ এখনো সন্ধান দিতে পারছে না তার।
মিনু বেগম জানান, ঘটনার দিন সকালে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সোহেল। সে সময় তার পরনে ছিল প্যান্ট আর হলুদ গেঞ্জি। এতদিন হয়ে গেল, তা-ও কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারছে না। আক্ষেপ করে বলেন, ছেলেটা আমার এভাবে হাওয়া হয়ে গেল!
ছোট ভাই সুমন মাহমুদ কাজ করেন সিদ্দিক বাজারের একটি স্যানিটারি দোকানে। তিনি জানান, দেশে ফেরার পর থেকে কোনো কাজ করত না তার ভাই। ঘটনার দিন সকালে বাসায় কিছু পারিবারিক বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর রাগ করে বের হয়ে আর ফেরেননি। কিন্তু রাগ করে এতদিন বাসার বাইরে থাকার কথা নয়। এরই মধ্যে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি।
সূত্রাপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি সোহেল নিজেই আত্মগোপনে গেছেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল ফোনও রেখে গেছেন। বিভিন্ন থানায় ওই প্রবাসীর নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি।