যুবসমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ এবং সেবায় নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান হবে। উন্নত সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে নিজেরও একটা আত্মতৃপ্তি আসবে। গতকাল বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুরে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ৪ বছর কঠোর অধ্যবসায়ের ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই জনগণের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবেন। আপনাদের অর্জিত জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। সব ক্ষেত্রে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে, এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে—সেটাই আমি চাই।
সেবাধর্মের প্রতীক বিশ্বের খ্যাতনামা নার্স ও মানবসেবী ফ্লোরেন্স নাইটিংগলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় এটা মনে রাখতে হবে, যারা আজ গ্র্যাজুয়েট হলেন, ডিগ্রি পেলেন, তাদের জনগণকে সেবা দেওয়ার কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। একজন রোগী চিকিৎসা এবং ওষুধে যতটা না সুস্থ হবে, ডাক্তারদের সহানুভূতি এবং নার্সদের সেবা পেয়েই কিন্তু তার চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে। তাদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নার্সিং পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে এবং এ সরকারের মেয়াদে প্রায় ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া অভিজ্ঞতার জন্য চাকরির বয়সসীমাও শিথিল করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকে তার সরকার উৎসাহিত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীর আসনসংখ্যা বৃদ্ধি, এ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষক প্যানেল তৈরি, প্রয়োজনীয় শিক্ষকের পদায়ন এবং নার্স ও মিডওয়াইফারিদের জ্ঞান এবং দক্ষতা উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ফলে বিদেশেও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করবেন বলেও জানান। এজন্য জমিও নেওয়া হয়েছে। এ স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল জাতির পিতার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ ট্রাস্ট বিভিন্ন সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে এ ট্রাস্টের মাধ্যমে সারা দেশে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। বিশেষায়িত এ হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা ট্রাস্টের একটি মানবিক উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ট্রাস্টের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বর্তমানে সারা বিশ্বে নার্সিং পেশার গুরুত্ব বাড়ছে, খ্যাতি বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দাতোসেরি মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আব্দুল রাজাক, ট্রাস্টের সহসভাপতি শেখ রেহানা এবং আমি মিলে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এখানে বিশেষায়িত হাসপাতালের উদ্বোধন করি এবং নার্সিং সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে এ নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। গ্র্যাজুয়েট নার্স যাতে হতে পারে, সে ব্যবস্থা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমেই আমরা নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিক বিন ইসমাইল, দ্বিতীয় ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থী আনামুল হক ও স্নাতক বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদের সভাপতি নরহাইজাম বিনতি মোহাম্মদ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং নার্সিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কলেজের ২১০ জন স্নাতকের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। তিনি ছয়জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে তাদের অসামান্য একাডেমিক রেকর্ডের জন্য প্রাইম মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
