বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৌষের শেষ দিন আজ শনিবার। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা এ উপলক্ষে পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবটি তাদের কাছে সাকরাইন উৎসব নামে পরিচিত। এ উপলক্ষে দিনভর ছাদে ছাদে চলে ঘুড়ি ওড়ানো। গানবাজনার অনুষ্ঠান। সন্ধ্যার পর সেই উৎসবই পরিণত হয় আলোর খেলায়। আতশবাজি, ফানুসের আর ডিজে লাইটিংয়ের আলোক ছটায় রঙিন হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা। তবে এই উদযাপনের পেছনেও তৈরি হয় অনেক দুর্ঘটনার গল্প। আতশবাজি এবং ফানুস ওড়ানোর কারণে প্রতিবছরই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এজন্য এ বছর সাকরাইন উৎসবে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। সাকরাইন উৎসবে রাজধানীবাসী যাতে ফানুস ওড়াতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ বেশ তৎপর। এ ছাড়া দোকানিদের ফানুস বিক্রি বন্ধে চলানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকাবাসী যাতে সাকরাইন উৎসব সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে পালন করতে পারে, এজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে; এজন্য নজরদারি থাকবে পুলিশের। এ ছাড়া এই রাতে সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে থানাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত থার্টি ফার্স্টে ফানুস থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানান, এ অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগ ঘটে ফানুস ও আতশবাজির কারণে। ঢাকা শহরের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফানুস ওড়ালে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেশি থাকে। জ্বলন্ত ফানুসগুলো উড়ে কোথাও না কোথাও পড়ে। বাসাবাড়ির ছাদে নয়তো বস্তি এলাকার ঘরবাড়ির ওপর এগুলো পড়ে। ফলে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাই ফানুস না ওড়াতে অনুরোধ জানা এই কর্মকর্তা।
লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন কালবেলাকে বলেন, সাকরাইন পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ওই উৎসবের সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িত। আমরা চাই সবাই যেন সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপন করতে পারে। প্রতিবছরই দেখা যায় আতশবাজি ও ফানুসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এ বছর আমরা এর পুনরাবৃত্তি চাই না। এজন্য রাজধানীবাসীকে ফানুস না ওড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দোকানিরা যাতে ফানুস বিক্রি করতে না পারেন এজন্য চকবাজারসহ পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
তিনি বলেন, বর্ষপূর্তি উদযাপনেও মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক লাইনে ফানুস পড়ে রেল চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তাই ফানুস না ওড়ানো বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উৎসব চলাকালীন আমাদের টিম টহলে থাকবে। অতিউৎসাহী কারও কারণে যদি অন্য নগরবাসীর সমস্যা হয়, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এবারও সাকরাইন দিবস উপলক্ষে ‘ঢাকাবাসী’ সংগঠনের উদ্যোগে ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন করা হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরান ঢাকার বকশিবাজারে অবস্থিত ঢাকা টাওয়ারের ছাদে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে। সেখানে বৃটিশ হাইকমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (পিবিআই) ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত থাকবেন।