
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেছেন, ১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মতো মুসলিম লীগকে ঘায়েল করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ওই সময়ে ৭২টি আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এই ৭২টি আসন ছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের। তখন এই সুযোগ আমরা না দিলে আওয়ামী লীগেরই জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনও পেতেন না এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধও হতো না। ১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো ভোট হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের বাইরে ভোট দিইনি। তাই আমাদের সব দাবি অগ্রাধিকারভিত্তিতে মেনে নিতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯টি সংসদীয় আসনের ৭২টি ছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। যুক্তফ্রন্টের ওই নির্বাচনে ৭২টি আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারতেন। তখন সিনিয়র নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিলেন ৭২টি আসন ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মূল দলে যাব। তখন প্রথমবারের মতো মুসলিম লীগকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল। এরপর ১৯৭০ সালেও আমাদের একশভাগ ভোট আওয়ামী লীগকে দিয়েছিলাম। ফলে পূর্বপাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বঙ্গবন্ধুর বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এই নেতা বলেন, পাকিস্তানে প্রথম বাংলাভাষার বিলটি সংসদে আনেন ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, তাকে মাত্র তিনজন বাঙালি সমর্থন দিয়েছিলেন। আর সেই তিনজনই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের।
তিনি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রসঙ্গে বলেন, আসল সর্বনাশ করেছিল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী করে। এতে ’৭২ সালের সংবিধানকে ইউটার্ন করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এরপর এরশাদ রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। যে কারণে আজ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মতো সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছে।
সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে কাজল দেবনাথ আরও বলেন, দেশে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, তেমনি আমাদের জন্য মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা নির্মাণ করতে হবে। কারণ, এগুলো নির্মাণে আমাদেরও দেওয়া ট্যাক্সের টাকা রয়েছে।
তিনি বলেন, যারা দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়ায় যায়, মালয়েশিয়া-লন্ডনে যায়, তারা আরাম আয়েশ করতে যায়। আর যারা ভারতে যায়, তারা নির্যাতিত হয়ে যায়, জীবন বাঁচানোর জন্য যায়।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, আওয়ামী লীগ বা যে দলই হোক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে গিয়ে ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আমরা মেনে নেব না, প্রতিবাদ করব।’
এর আগে সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও। মহানগর সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ ঘোষের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, সংগঠনের সহসভাপতি বিজয় কুমার ঘোষ, সহসভাপতি ও সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ও অ্যাডভোকেট তাপস পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপ্না রানী বিশ্বাস, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেমন্ত কৈরাশী, ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি পরিষদ খুলনা চ্যাপ্টারের চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এমএম মুজিবুর রহমান, জাতীয় মহিলা সংস্থা খুলনার চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল হালদার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণপদ দাস, ঐক্য পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি বিমান বিহারী রায় অমিত, মহানগর সহসভাপতি সমর কুণ্ডু, পূজা পরিষদ জেলা সাধারণ সম্পাদক বিমান সাহা। অনুষ্ঠানে যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. শ্যামল সাহা ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি রবার্ট নিক্সন ঘোষ, ঐক্য পরিষদ মহানগর নারী সম্পাদক মুক্তি রায়, ঐক্য পরিষদ রূপসা থানা সভাপতি গণেশ চন্দ্র পাল, হরিণটানা থানার সভাপতি অভিজিৎ রায় অভি, পাইকগাছা থানার সাধারণ সম্পাদক দিপ্তি রঞ্জন সেন, খালিশপুর থানার সাধারণ সম্পাদক সমির সরকার, যুব ঐক্য পরিষদ জেলা সভাপতি স্বপন কুমার রায় এবং ছাত্র ঐক্য পরিষদ জেলা সদস্য সচিব অভিজিৎ সরকার রাহুল।