দুলাল হোসেন
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পুরান ঢাকাকে নতুন রূপ দিতে চায় রাজউক

পুরান ঢাকাকে নতুন রূপ দিতে চায় রাজউক

ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকাকে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন শহরে পরিণত করতে চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ জন্য পুরান ঢাকার ৭টি এলাকা নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের নাম হচ্ছে ঢাকা নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প, যার প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় পুরান ঢাকার রাস্তা প্রশস্তকরণ, রাস্তার পাশের প্লটে ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন, স্থানীয়দের ব্লক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান ও অগ্নিকাণ্ডের সময় পানি সরবরাহ নিশ্চিতে হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপন করা হবে।

রাজউকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্যানুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৮ কোটি মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জরাজীর্ণ স্থাপনা, সরু রাস্তা, অপর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা ও বিপজ্জনক ভূমি ব্যবহারে পুরান ঢাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর এলাকায় পরিণত হয়ে আছে। সেখানকার বিদ্যমান সমস্যা দূর করে একটি পরিকল্পিত শহরে পরিণত করতে নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পুরান ঢাকার বংশাল, চকবাজার, ইসলামবাগ, মৌলভীবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ এই ৭টি এলাকার উন্নয়ন করা হবে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এ অর্থের জোগান দেবে।

এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্পে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত পুরান ঢাকাকে সংস্কার, আংশিক পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিকল্পিত, পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এলাকায় রূপান্তর করতে হলে আরবান রিজেনারেশন বা নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন। রাজউক এরই মধ্যে পুরান ঢাকার জন্য এ ধরনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এখন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট প্রপোজাল (টিএপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে, যা অনুমোদনের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হবে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটির কাজ শুরু হলে শেষ হতে সময় লাগতে পারে প্রায় ৫০ বছর। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে যাদের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয়রা যদি ব্লকভিত্তিক উন্নয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ করতে চায়, রাজউক তাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে। তিনি আরও বলেন, রাজউক পুনঃউন্নয়নের মাধ্যমে পুরান ঢাকাকে নতুন রূপ দেওয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে পুরান ঢাকা হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি নিরাপদ এলাকা। তবে এ কাজে স্থানীয়দের রাজউককে সহায়তা করতে থাকতে হবে।

বংশাল এলাকার আয়তন ১২ দশমিক ৭১ একর। আবাসিক, বাণিজ্যিক ও মিশ্রসহ ৫০০টি স্থাপনা রয়েছে। সেখানকার স্থাপনাগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে করা হয়নি। এলাকার রাস্তাগুলো খুবই সরু। রাস্তা সরু হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন মানুষ। চকবাজার একটি পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র। এ এলাকার ১ হাজার ১০০টি দোকান রয়েছে। চকবাজারের বেশির ভাগ মার্কেট ও স্থাপনা পুরোনো ও জরাজীর্ণ। গলির ভেতরের অবকাঠামো অনিরাপদ। আগুন বা ভূমিকম্পের জন্য চকবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ইসলামবাগ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ১৪ দশমিক ৯৪ এলাকার আকারের এলাকাটিতে ৫৪০টি স্থাপনা রয়েছে। অনেকগুলো শিল্প ও বাণিজ্যিক কারখানাও রয়েছে। কারখানাগুলোর কারণে সেখানকার বাতাস উষ্ণ থাকে এবং প্রচুর শব্দ হয়। সেখানকার বেশির ভাগ রাস্তা সরু, পথচারীর জন্য ফুটপাত নেই ও যানজট লেগেই থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় ইসলামবাগের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

প্রায় ৩৩ একরের লালবাগে বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার ১০০টি অবকাঠামো রয়েছে। বেশির ভাগ রাস্তা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে হালকা শিল্প ও দোকান। আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সেখানে মুঘল আমলের ঐতিহ্য ‘বড় কাটারা’ রয়েছে। অপরিকল্পিত ইমরাত নির্মাণ ও সরু রাস্তার কারণে সেখানকার জীবনযাত্রার মান খুব খারাপ। এলাকাটি অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

কামরাঙ্গীরচরের আয়তন প্রায় ৩৩ দশমিক ৭৬ একর এবং ১ হাজার ৫৩০ অবকাঠামো রয়েছে। এলাকাটির বেশির ভাগ অবকাঠামোই মিশ্র ব্যবহার করা হয়। সেখানে নিচ ও প্রথমতলায় মুদি দোকান বা অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ওপরের তলা আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় স্টিল, প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা আছে। এ এলাকা দ্রুত বিকশিত হয়েছে। হাজারীবাগের আয়তন ১১১ দশমিক ৩ একর। সেখানে ২ হাজার অবকাঠামো রয়েছে। এলাকাজুড়ে ট্যানারি শিল্প ছিল, যা এখন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের প্রযুক্তির ব্যবহার, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন ব্যবস্থাপনার কারণে হাজারীবাগ একটি বিপর্যস্ত এলাকা। সেখানকার বেশির ভাগ জমি এখন অব্যবহৃত, অনুন্নত। পুরান ঢাকার এলাকার মধ্যে ছোট হচ্ছে মৌলভীবাজার, যার আয়তন প্রায় ৬ একর। এলাকাটিতে মূলত দুটি বাজার রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লাজ ফার্মায় চাকরির সুযোগ, ২০ বছর হলেই আবেদন

বেসরকারি হাসপাতালের পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দুই পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক পেটালেন আ.লীগ নেতা

ডা. জাফরুল্লাহর স্মরণসভায় বক্তারা / দেশ ও জাতি দুঃসময় পার করছে

এবার মাদ্রাসাও বন্ধের ঘোষণা

ভোটারবিহীন ক্ষমতা সৌভাগ্য নয়, দুর্ভাগ্য: স্বপন 

পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি জাতিসংঘে তুলে ধরল বাংলাদেশ

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ / বিআইপিডির কোটি টাকা পরিশোধ করছে না ফার ইস্ট ফাইন্যান্স

কিশোরগঞ্জে খালে ডুবে ২ ভাইয়ের মৃত্যু

বিএনপির কারাবন্দি নেতা খোকনের পরিবারের খোঁজ নিলেন মহানগরীর নেতারা

১০

কাতার ছাড়ার চিন্তা করছেন ফিলিস্তিনি নেতারা

১১

তীব্র দাবদাহে জবির ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত কাল

১২

গরম কমাতে হিট অফিসারের যত পরামর্শ 

১৩

এবার আগুনে পুড়ে ছাই ৪০ বিঘা পানের বরজ

১৪

সাভারে ভাঙারির গোডাউনে আগুন

১৫

গণতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে রাখতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

১৬

আগুনে রোদ আর তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ

১৭

যুক্তরাষ্ট্রের উৎসবে সোহানা সাবা

১৮

মিনিস্টার হাই-টেক পার্কে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি

১৯

রাতেই যেসব জেলায় ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

২০
*/ ?>
X