
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বসবাসকারীর। দীর্ঘদিন ওই ঘরগুলো সংস্কার না করায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঘরের টিনগুলোয় মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই পানি চুইয়ে পড়ে ঘরের ভেতর। বৃষ্টির রাতে জেগে কাটাতে হয় বসবাসকারীদের। বিষাক্ত সাপ ছাড়াও যখন তখন কুকুর-বিড়াল ঢুকে পড়ে এসব ঘরে। উপজেলার পাকা ইউনিয়নের ওই প্রকল্পটিতে কয়েক বছর ধরে এভাবেই বাস করছে ৪০টি পরিবার।
বসবাসকারীদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও তারা বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দেননি। এমনকি কোনো খবরও নেন না। বরং নিজেদের সেরে নিতে বলেন। তবে আবাসন প্রকল্পটিকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে ওই স্থানে নতুন করে গৃহ নির্মাণ করার দাবি তাদের।
আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা বলেন, তাদের ঘরগুলোর মেঝে মাটি দিয়ে তৈরি এবং ঘরের কিনারা ইট দিয়ে পাকা করা। এ ছাড়া বেড়া ও চালে টিন ব্যবহার করা হয়েছে। এ অবস্থায় ঘরগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘরগুলোর বয়স হওয়ায় টিনের বেড়াগুলোর নিচের অংশ ভেঙে গেছে। এখন সাপ, ব্যাঙ, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী ঘরের ভেতর অবাধে চলাচল করতে পারে। তা ছাড়া ৩০টি ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে অসংখ্য ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে সারারাত জেগে-বসে কাটাতে হয়। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই ঘরের টিনের ওপর পলিথিন দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয় না। এ ছাড়া ৪০টি পরিবারে ১৬০ জনের জন্য মাত্র দুটি নিম্নমানের শৌচাগার রয়েছে। সরকারি কোনো অনুদানও তাদের দেওয়া হয় না। ফলে চরম বিপাকে রয়েছেন তারা।
পাকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন জানান, তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০০৫ সালে আবাসন প্রকল্পের আওতায় ওই ৪০টি ঘর নির্মাণ করছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল। ২০০৬ সালে ঘরগুলো ভূমিহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরও বলেন, ওই আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে অনেক কাজ করার কথা ছিল। পরে সেগুলোর কিছুই হয়নি। বর্তমানে সেখানে বসবাসকারীরা নানা দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বসবাসকারী ছামিরুল ইসলাম বলেন, প্রথম থেকেই তিনি পরিবার নিয়ে এ আবাসন প্রকল্পের একটি ঘরে থাকেন। তার ঘরের বেড়া ও চালের টিন নষ্ট হয়ে ভেঙে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে থাকার উপায় থাকে না। গামলা দিয়ে ঘরের জমা পানি সেচতে হয়। তার মতোই এখানে যারা রয়েছেন, সবারই একই অবস্থা।
সেখানে বসবাসকারী হাসি বেগম বলেন, বেড়া ভাঙা হওয়ায় ঘরে রাখা খাবার কুকুর-বিড়াল ঢুকে খায়। বৃষ্টি হলে ঘরে থাকার উপায় থাকে না। বিছানা-কাঁথা সব ভিজে যায়।
আবাসনের সভাপতি বাবলুর রহমান বলেন, বর্তমানে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখানকার প্রতিটি পরিবার খুব কষ্টে দিন পার করছে। উপজেলা প্রশাসনকে সমস্যাগুলো অনেকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঘরগুলো দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি আবাসন প্রকল্পটিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে ওই একই স্থানে নতুন ঘর নির্মাণের দাবিও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইউএনও নীলুফা সরকার বলেন, এ উপজেলায় কিছুদিন আগে যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।