নদী খনন ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জের পিয়াইন নদী। একসময়ের খরস্রোতা পিয়াইন নাব্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। পাহাড়ি ঢলে বছরের পর বছর পলি এসে নদীর তলদেশ ভরাট এবং নদীতে বাঁধ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়ন, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর দুই পাশের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে চাষাবাদ। তাই নদীটি রক্ষা করতে পুনর্খননের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার চানপুর, ভরতপুর, হরিপুর, রামপুর, কুকরাপশী, শেরমস্তপুর ও রহিমাপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পিয়াইন নদী সাচনা গ্রামের পাশে এসে বাঁধের কারণে শেষ হয়েছে। উত্তাল খরস্রোতা পিয়াইন যেন এখন স্রোতহীন। শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে নদীতে পানি কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে। বাকি ৯ মাস নদী শুকিয়ে মরা খালে রূপ নেয়। বর্ষা শেষে পানি কমতে শুরু করলে স্থানীয়রা নদীর দুই পাড়ে ধান ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন। এ সময় নদীতে চর জেগে নালা হয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। এতে নদীর কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমরসমান থাকে। তবে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা সময়মতো সেচ দিতে পারেন না। এতে কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত ফলনের ফসল পান না। এ ছাড়া ব্যাহত হচ্ছে পণ্যবাহী নৌ-চলাচলের সুযোগ। নৌপরিবহনের কাজে নিয়োজিত মাঝি ও শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে পরে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন। মোদ্দা কথায়, মৃত নদীতে থমকে যায় বিপুল সম্ভাবনার কর্মযজ্ঞ।
সাচনা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রামপুর গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, তিন যুগ আগে সাচনা বাজারের মুখে সুরমা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল পিয়াইন নদী। কিন্তু কালের বিবর্তনে পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট ও দখল হওয়ায় দুই নদীর সংযোগস্থল চোখে পড়ে না। ফলে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, পাশাপাশি আশপাশের হাওরের জমিতে সেচ দিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। খরস্রোতা এই নদীর ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নৌযান সাচনা বাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় মালপত্র ও যাত্রী পরিবহন করত। জামালগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা রানী মোদক জানান, পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলি এসে নদীর ৮০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীতে বাঁধ দিয়ে স্রোত আটকানোতে বাকি ২০ শতাংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নদীতে পানি না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করে নদী খনন করলে আবার নদীটি পূর্বের রূপ ফিরে পাবে। পাশাপাশি মাছের উৎপাদনও বাড়বে। সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন মাসুক মিয়া বলেন, নদীটি খনন করা হলে পাশের গ্রামের মানুষ পানি ব্যবহার করতে পারবে। নদীর দুই পাড়ের কৃষিজমিতে সেচের সংকট দূর হবে।
জামালগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩টি নদী খননের কাজ চলছে। এর মধ্যে জামালগঞ্জের কানাইখালী নদীর খনন কাজ চলমান রয়েছে। পিয়াইন নদী খননের বিষয়টি জেলা মিটিংয়ে উপস্থাপনা করব।