আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আদালতে যাবেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

আদালতে যাবেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

পরিকল্পনা ছাড়া পঞ্চম শ্রেণিতে ১৩ বছর পর বৃত্তির প্রবর্তন, অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা নির্ধারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং ফল ঘোষণা নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ডে সমালোচনার তুঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। প্রাথমিকের বৃত্তির প্রথম প্রকাশিত ফল ও সংশোধিত ফলের মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের বারবার সিদ্ধান্ত ও ফলাফল পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবকই বলছেন, সংশোধিত ফলে ত্রুটি রয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের অনেকেই সংশোধিত ফল চ্যালেঞ্জ করেছেন। এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এসব অভিভাবক বৃত্তির সংশোধিত ফল পরিবর্তন চান। তাদের অনেকেই প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে নামবেন বলে জানিয়েছেন।

অভিভাবকদের অভিযোগ, তাড়াহুড়ো করে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করায় এমন সমস্যা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে দেশের বাইরে কিংবা গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে যায়। এর মধ্যেই হঠাৎ করে বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষণা আসে। পরবর্তীতে ঘুরতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা শুরুর দু-এক দিন আগে একপ্রকার ডেকে এনে পরীক্ষায় বসানো হয়। তারা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলেও যারা বৃত্তির জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে, তাদের নাম তালিকায় নেই। এ কারণে বৃত্তি পরীক্ষার এই ফলকে প্রশ্নবিদ্ধ বলছেন অভিভাবকরা।

শরীয়তপুর সদরের ৪৪নং পালং তুলাসার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ‘ফার্স্ট গার্ল’ সৈয়দা তাসফিয়া তাসনিম। সম্প্রতি ঘোষিত প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে প্রথমে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। দুপুরে বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে যখন প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয়দের মিষ্টি খাওয়ানো শেষ, সন্ধ্যায় স্কুলশিক্ষক জানান, বৃত্তির ফল স্থগিত করা হয়েছে। পরে সংশোধিত ফলে দেখা যায়, আগেরবার ১০ জন বৃত্তি পেলেও এবার পেয়েছে ৩৪ জন। কিন্তু মেধাবী ও ক্লাসে প্রথম হয়েও ট্যালেন্টপুল থেকে একমাত্র বাদ যাওয়া নামটি তাসনিমের।

সংশোধিত ফল ঘোষণার পরদিন গত ২ মার্চ তাসনিমের মা রাশিদা আক্তার শরীয়তপুর থেকে যান রাজধানী ঢাকার মিরপুরে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। তিনি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের কাছে ফলাফলের এই পরিবর্তনের ব্যাখ্যা চান। মহাপরিচালক বৃত্তি পরীক্ষার রোল নম্বর লিখে ও সব সময় ক্লাসে ভালো ফল করে সেটি জানিয়ে একটি আবেদন করতে বলেন। রাশিদা তাই করলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। সে কারণে তিনি রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাশিদা আক্তার বলেন, পঞ্চম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৬০০-এর মধ্যে ৫৯৯ পেয়ে আমার মেয়ের মতো আরও দুজন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এমনকি পরীক্ষায় যারা ওর থেকে দেখে দেখে লিখেছে, তারা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ের নাম বাদ পড়েছে। আমি সরকারি চাকরি করি। মেয়ের বাবা ব্যবসা করে। অনেক সময়ই মেয়ে বাসায় একা থাকে। এখন তো ডিজিটালের যুগ। যদি সে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তার দায় কে নেবে? তিনি বলেন, মেয়েকে শরীয়তপুর গার্লসে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু সংশোধিত ফল ঘোষণার পর থেকে আমার মেয়ে ঘর থেকে বের হয় না। স্কুলে যায় না, প্রাইভেটেও যায় না। তিনি আরও বলেন, যে ফল দুই মাস ধরে তারা প্রস্তুত করল, সেটি ভুল হলো। তাহলে এক দিনের মধ্যে যেই ফল দেওয়া হলো তা সঠিক কীভাবে হয়? যেই বৃত্তি শিশুর ওপর মানসিক টর্চার করে, ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়, সেই বৃত্তি তো ১৩ বছর পর আনার দরকার ছিল না।

বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। রাজধানীর শহীদ বীরউত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের স্কুল শাখার পঞ্চম শ্রেণির একজন ছাত্রীর মা রাবেয়া ওয়াহীদ বলেন, প্রথম প্রকাশিত ফলে আমার মেয়ে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। সংশোধিত ফলে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাবে, এটা ছিল আমার ও স্কুলের শিক্ষকদের দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু সংশোধিত তালিকায় তার নামই নেই। ফল ঘোষণার পরদিন আমরা অধিদপ্তরে যাই। শুধু আমি নই, আরও অনেকেই যায়। মহাপরিচালক আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, যারা প্রথমে বৃত্তি পেয়ে বাদ পড়েছে তাদের জন্য কী করা যায়, তা বিবেচনা করবেন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। বৃত্তির ফলে আমার মেয়ে বাদ পড়বে, এটি মেনে নিতে পারছি না। আমরাও বসে থাকব না, প্রয়োজনে আদালতে যাব।

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের রূপনগর শাখার একজন শিক্ষার্থীর (বৃত্তি পরীক্ষার রোল ৪৫৬) মা জলি খাতুন বলেন, প্রথমে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেলেও সংশোধিত ফলে আমার ছেলের নাম বাদ পড়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, পরীক্ষায় সে ৯৩ পেয়েছে। তাকে বৃত্তি না দিয়ে কীভাবে ৮৮ পাওয়া শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়?

ভিকারুননিসার পঞ্চম শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া শিক্ষার্থীরাও প্রথমে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। তাদের অভিভাবকরা জানান, প্রথম প্রকাশিত ফলে তাদের সন্তানরা ৯২ ও ৯৩ করে পেয়ে মেধাবৃত্তি পায়। তবে সংশোধিত ফলে তাদের নাম বাদ পড়েছে। ফল নিয়ে চলতি সপ্তাহে নতুন সিদ্ধান্ত না এলে এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবক আগামী সপ্তাহে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, প্রাথমিকে সমাপনী বন্ধ হওয়ার ঘোষণায় ১৩ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষা আনয়ন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও ছিল চূড়ান্ত পরিকল্পনার অভাব। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় হঠাৎ করেই প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এর পরই ঘটে বিপত্তি। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব ও তাড়াহুড়োর কারণে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে থাকে। সবশেষ পরীক্ষার ফলেও কারিগরি ত্রুটি দেখিয়ে পরিবর্তন আনা হয়। সেই পরিবর্তন নিয়েও সমালোচনা শেষ হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলের চার ব্যক্তি ও দুই সংস্থার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা

স্বামীর প্রশংসা করার দিন আজ

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ

নিষেধাজ্ঞায় পড়া মার্তিনেজকে ছাড়াই সেমিফাইনাল খেলবে অ্যাস্টন ভিলা

বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু হাসপাতালে ভর্তি

হেলিকপ্টারে নতুন বউ আনলেন ছাত্রলীগ নেতা

এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ গেল ৪০৭ জনের

আইভীকে হুংকার হেফাজত নেতার / আমাদের মান-ইজ্জতে হামলা হয়েছে, সাবধান হয়ে যাও

নামছে পানির স্তর, বাড়ছে সংকট

মিশা-ডিপজলকে মালা পরিয়ে বরণ করলেন নিপুন

১০

তীব্র গরমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নির্দেশনা

১১

সিরিয়ায় ফের শক্তি দেখাল আইএস, ২৮ সেনা নিহত

১২

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

১৩

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত এলো

১৪

আদালতে ছিলেন ট্রাম্প, বাইরে নিজ শরীরে আগুন দিলেন যুবক

১৫

দীর্ঘকাল পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দৌড়ালেন ক্রিকেটাররা

১৬

কুকুরের কামড়ে একই এলাকার শিশুসহ আহত ৪

১৭

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল আরেক দেশ

১৮

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

১৯

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ২৭ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

২০
*/ ?>
X