
সময় তখন আনুমানিক বিকেল পৌনে ৫টা। অন্য সময়ের মতোই যানজটে ঠাসা গুলিস্তানের সড়ক। প্রতিদিনের মতোই দোকান করছিলেন রফিক। এমন সময় তিনি বিকট শব্দ শুনে হকচকিয়ে ওঠেন। কয়েক সেকেন্ড পরই ভবনগুলো থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। একবার তিনি ভেবেছিলেন ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ, আরেকবার ভেবেছিলেন এ যেন তুরস্কের মতো ভূমিকম্প।
গত মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ রফিক। পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের ৭ তলা ওই ভবনে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। বিস্ফোরণে ৭ তলা ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা বিধ্বস্ত হয়। বিস্ফোরণে পাশের আরেকটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে ভবনটির দেয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। ভাঙা টুকরার আঘাতে আহত হয়েছেন পথচারী ও আশপাশের মানুষ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যাতে কেঁপে উঠেছিল চারদিক। এরপর গাঢ় ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল পুরো এলাকা। হঠাৎ কুয়াশার মতো আবছা অবস্থা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সে সময় বিআরবি কেবলসের কর্মী মো. মেজবাহ ওই পথ ধরে আসরের নামাজের জন্য পাশের মসজিদে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারিদিক। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না কিছুক্ষণ। কী ঘটছে, সেই আতঙ্কের মধ্যেই দেখেন ফুটপাতে, রাস্তায় পড়ে আছেন অনেক লোক, রক্তাক্ত। কেউ চিৎকার করছেন, কেউ নিথর।
নর্থ সাউথ রোডে সে সময় চলমান একটি বাসের ওপরও ভবনের ধসে পড়া অংশ এসে ছিটকে পড়ে। সাভার পরিবহনের ওই বাসের অনেক যাত্রী আহত হন। বাসটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি কাচও অবশিষ্ট ছিল না। এ সময় রিকশা, গাড়ির যাত্রী ও চালকরাও ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে ভবনের ভাঙা টুকরোর আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। পুরান ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন, তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কিয়ামত হলে বুঝি এমনই হয়। পারমাণবিক গল্পের কথা শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমারই মাথার ওপর কেউ বোমা মেরেছে।