শাটারগুলো জং ধরে ভেঙে পড়েছে। পাশের দেয়াল চুইয়ে টয়লেটের পানি এসে জমা হয়েছে সেই দোকানের ভেতর। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এক্সক্যাভেটর সিঁড়ির ধাপে কেউ পা রাখলেই উঠে যাচ্ছে। চারপাশ ধুলা-আবর্জনায় ভর্তি, কোনো কোনো ফ্লোরে গিয়ে দিনেও জ্বালাতে হচ্ছে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট। বর্ণনা শুনে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ভবনের চিত্র মনে হলেও এ দৃশ্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিপণিবিতান বি-ব্লকের।
সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধার তকমা লাগিয়ে আরও ১০ বছর আগে উদ্বোধন হওয়া মার্কেটটিতে দোকান রয়েছে ৪৫০টি। দীর্ঘ এ সময়ে চালু হয়েছে মাত্র পাঁচ থেকে সাতটি দোকান। তাও কেউ টং দোকানের আদলে বসিয়েছেন চা-নাশতার দোকান, কোনোটাতে চলছে ঝুট কাপড়ের ব্যবসা। বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কারণে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটিতে দোকান চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বছরের পর বছর ধরে ‘ভাড়া দেওয়া হবে’ সাইনবোর্ড ঝুললেও দোকান নিতে আসছেন না কেউ।
এ অবস্থায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা বলছেন, ‘মাল্টিস্টোরিড কমার্শিয়াল বিল্ডিং’ নামে নির্মিত এ ভবনটি এখন মাল্টি সমস্যায় জর্জরিত। বৈদ্যুতিক সংযোগ পেতে ভোগান্তি, নকশার বাইরে গিয়ে অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ, পাশের একটি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের রোষের মুখে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনটি। গত ১০ বছরে দোকান চালু করা প্রসঙ্গে বেশ কয়েক দফা চিঠি দিয়েও কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পাওয়া যায়নি। এমনকি কোনো কোনো দোকানের মূল মালিক কোথায়, সেই খোঁজও মিলছে না। এখন মার্কেটের সামনে একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়ে প্রকৃত মালিক খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
সিডিএর তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের অক্টোবরে উদ্বোধন হয় ভবনটি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন মার্কেটটি কে চালাবে তা নিয়েই দ্বন্দ্বের জেরে মূলত এমন দশা মার্কেটের। চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ কারা করবেন তা নিয়েই কেটে গেছে গত ৯ বছর। সবশেষ ২০২২ সালের আগস্টে ‘বিপণিবিতান বি-ব্লক দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সমিতি পরিচালনার অনুমোদন দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এরপরও দুর্গতি কাটেনি।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আখতার কালবেলাকে বলেন, ‘দোকান চালু হয়েছে ২০১৩ সালে, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি ২০২২ সালে। এর আগে যারা দায়িত্বে ছিল তাদের কারণে এ অবস্থা। কিন্তু আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সিডিএ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আন্তরিক।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস কালবেলাকে বলেন, ‘সিডিএর দায়িত্ব দোকান ভাড়া দেওয়া। দোকান চালু করে দেওয়াটা আমাদের কাজ নয়। যারা দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন উনারাই চালু করবেন।’ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। মার্কেট পরিচালনার বিভিন্ন খরচ আমরা নিয়মিত দিচ্ছি। আগে পাশের পাহাড় থেকে পানি ঢুকে পড়ত, সেগুলো ঠিক করে দিয়েছি। লিফট-এক্সক্যাভেটর নিয়মিত মেরামত হয়। দোকান চালু না হলে এক্সক্যাভেটর দিয়ে কী হবে? এখানে যারা দোকান নিয়েছেন তারা বেশিরভাগই প্রবাসী। তাই বরাদ্দপ্রাপ্তরা দোকানগুলো চালু করছেন না। এটাই মূল সমস্যা।’
মার্কেটে ময়লার ব্যবসা : সিডিএর বহুতল এ ভবনে ক্রেতা-বিক্রেতা না থাকলেও চলে ‘ময়লার বাণিজ্য’। অভিযোগ রয়েছে, ঝুমুর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মার্কেটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ইজারায় দিয়েছে সিডিএ। কিন্তু প্রতিদিন মার্কেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কাজের নামে মাস শেষে প্রায় ৩০ হাজার টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অচল মার্কেটটি আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।