
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টা—বিকট বিস্ফোরণে চমকে ওঠে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজার এলাকার লোকজন। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার প্রতিটি ভবন কেঁপে ওঠে সেই বিস্ফোরণে। নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাততলা ভবনে বিস্ফোরণের পর ওই জায়গাটি পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা, বিস্ফোরণে ভেঙে যাওয়া দেয়ালের ইট আছড়ে পড়ছিল সড়কে গাড়ির ওপর। কাচ ও চীনামাটির তৈরি বেসিন ও স্যানিটারির চোখা টুকরোগুলো এদিক-সেদিক বিদ্যুৎ বেগে গিয়ে আঘাত করেছে, যেন গ্রেনেড থেকে আসছে স্প্লিন্টার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেকেই। প্রতিদিনের মতোই মানুষ আর যানবাহনের ভিড় ছিল সিদ্দিকবাজার এলাকার রাস্তায়। লোকজন দিনের কাজ শেষে ফিরছিলেন বাড়ি। কেউ রিকশায়, কেউ বাসে, সিএনজিতে করে ফিরছিলেন ঘরে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল সারাদিনের কাজের শেষে একটু বিশ্রামের অপেক্ষা।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা মেহবুবা আক্তার সাথী। কাজের প্রয়োজনে গিয়েছিলেন সিদ্দিকবাজারে। কাজ শেষে বিকেলে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। রাস্তার যে পাশে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তার বিপরীত পাশেই সিএনজিতে ছিলেন তিনি।
সাথী কালবেলাকে বলেন, বিস্ফোরণের সময় ঠিক ওই জায়গাতেই ছিল আমার সিএনজি। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ, মনে হচ্ছিল সব ভেঙে যাচ্ছে। আমার সিএনজিতে ইট-কাচের টুকরা এসে পড়ছিল। একটু ধাতস্ত হওয়ার পর সিএনজি থেকে নেমে দেখি অন্যপাশে ধ্বংসস্তূপ। চোখের সামনে দেখি রক্তে ভেজা মানুষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জুনায়েদ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আসরের নামাজের একামতরত অবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথমে ভেবেছিলাম ভূমিকম্প। পুরো এলাকা কাঁপছিল। নামাজ শেষ করে ঘটনাস্থলে এসে দেখি একটি বাস একদম পুড়ে গেছে। আহত অবস্থায় অনেক মানুষ সেই বাস থেকে বের হওয়ার জন্য চিৎকার করছিল। অনেকেই ফুটপাতে ভ্যানের ওপর শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। ছিটকে আসা স্যানিটারি আর কাচের টুকরার আঘাতে আহত হন অনেকেই। রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছিলেন তারা। সিদ্দিকবাজারের স্থানীয় মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মনে হচ্ছিল বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। দৌড়ে এসে দেখি সব বিধ্বস্ত। রক্ত আর মানুষের চিৎকার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণ হওয়া ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতলা, দোতলা এবং তৃতীয় তলার ছাদের অংশ ধসে আন্ডারগ্রাউন্ডে পড়েছে। আশপাশের রিকশা ও ভ্যান বিস্ফোরণে ভেঙে পড়া দেয়াল ও কংক্রিটের নিচে চাপা পড়েছে। গত মঙ্গলবার নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাততলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।