কুবি অশান্তের পেছনে কে?

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।ছবি : সংগৃহীত

ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস। এজন্য প্রক্টরকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করেছে কুবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে প্রক্টর বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকায় এসব অভিযোগ করছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের দাবি, নিজের আধিপত্য বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রতিটি সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ইন্ধন দেন প্রক্টর।

গত ৮ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় গুরুতর আহত হন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের অভিযোগ, ঘটনার মূলহোতা রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত স্থানীয় যুবদল নেতা রনি, হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ ১২ থেকে ১৫ জন কর্মী। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, সংবাদ সম্মেলনে বিচারের দাবি এবং মৌন প্রতিবাদ জানায়। সংবাদ সম্মেলনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানায় শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগ। তারা বলে, এ ঘটনার সঙ্গে প্রক্টর সরাসরি জড়িত।

শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাসান বিদ্যুৎ বলেন, খুনি বিপ্লব ও ছাত্রদলের লোকজন কীভাবে হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে মারধর করে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আগেও দেখেছি প্রক্টর তার ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ছাত্রলীগের মাঝে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করেন। আবার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে নীরব ভূমিকা পালন করেন। তার ইন্ধনেই যুবদলের নেতা বহিরাগত কিছু লোক দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছাত্রদলের লোকজন দিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর আগে পহেলা জানুয়ারি বহিরাগত কিছু ছেলে বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাতে বাধা দেয়। এ ঘটনায় প্রক্টর বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে।

গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর পরপরই ২০১৭ সালের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহির নেতৃত্বে মোটরবাইক শোডাউন, ককটেল বিস্ফোরণ করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে বহিরাগতরা। পরদিন প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে আবারও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শোডাউন দেয়। ঘটনার পর বহিরাগতদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আবাসিক হল সিলগালা করে প্রক্টর। বাড়ি ফেরার পথে কুবি শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর হামলা চালায় বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ কয়েকজন নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি প্রক্টর।

বিষয়টি তদন্ত করে প্রক্টরিয়াল টিমকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন এবং সে অনুযায়ী মামলা করার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। পরে এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

গত ৬ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি প্রক্টর। সেসময় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে শিক্ষার্থীরাও প্রক্টরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ও পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেন।

গেল সেপ্টেম্বর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও কেন পুলিশ মোতায়েন হয়নি বলেও প্রশ্ন তোলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কুবি প্রশাসনকে।

দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়ে উপাচার্য পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি প্রক্টর এবং রেজিস্ট্রারের। এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কুবি উপচার্য।

ছাত্রলীগের অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজি ওমর সিদ্দিকী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স-নীতি ঘোষণা করায় কিছু মহল যাতে অভিযোগ করছে এটা ষড়যন্ত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, কাজি ওমর সিদ্দিকীকে যেভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ভূমি বাণিজ্যের সঙ্গেও তিনি জড়িত। বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ব্যক্তিগত সিন্ডিকেট সদস্যদের পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা দাবি করেন, বিলুপ্ত কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ মদত দিচ্ছে। তাদের ইন্ধনে সড়ক, মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রক্টরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে প্রসঙ্গে বলেন, অপরাধী যেই হোক প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com