
স্ত্রীর মৃত্যুর পর বিধবা হালিমা বেগমকে বিয়ে করেন এইচ এম দেলোয়ার হোসেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিনটি কন্যা সন্তান থাকলেও তার কোনো ছেলে ছিল না। তাই পরবর্তী উত্তরাধিকারী রেখে যেতে একটি পুত্র সন্তানের প্রত্যাশা ছিল দেলোয়ারের। এরই মধ্যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা জানান তিনি সন্তানসম্ভবা। নির্দিষ্ট সময় পর এক পুত্রসন্তান জন্মও দেন তিনি। বাবা নিজের পছন্দে নাম রাখেন রিয়াদুস সালেহীন ওরফে হামদান। তবে সাত মাস পর জানতে পারেন ওই শিশু আসলে তাদের সন্তান নয়। তাকে ক্লিনিক থেকে টাকার বিনিময়ে দত্তক এনেছেন হালিমা।
দেলোয়ার হোসেন একসময় সৌদি প্রবাসী ছিলেন। বর্তমানে তিনি সাভারের তালবাগে থাকেন এবং সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। এ ঘটনার পর সাভার থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা।
গতকাল সোমবার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যেমে ওই শিশুকে তার আসল পিতা-মাতার কাছে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে ভাগ নিতে অন্যের সন্তানকে নিয়ে আসেন হালিমা। বিয়ের তিন মাস পর তিনি বরগুনায় বাবার বাড়িতে গিয়ে স্বামীকে গর্ভধারণের কথা জানান। ওই সময়ে তিনি বিভিন্ন ক্লিনিকে ছেলে শিশু সংগ্রহের চেষ্ট চালান। এর প্রায় ১০ মাস পর তিনি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর ক্লিনিক থেকে একটি শিশু সংগ্রহ করে নিজের বলে পরিচয় দেন। এ সময়জুড়ে তিনি বাবার বাড়িতে ছিলেন। তাই দেলোয়ারও কিছু বুঝে ওঠতে পারেননি। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর তিনি সাভারে স্বামীর বাড়িতে ফিরে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে থাকেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, কিছুদিন আগে দোলোয়র সন্দেহবশত তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ শিশু তাদের নয় বলে স্বীকার করেন তিনি। এর জেরে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে সাভার থানায় একটি অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে ওই নারীর কাছ থেকে শিশুর আসল পিতা-মাতার ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। আসল বাবা-মা শিশুকে গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করায় তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সময় শিশুর পালক মা হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিয়ের পর তিনি একবার সন্তানসম্ভবা হলেও সেই সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে স্বামীও সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন। তাই নিরুপায় হয়ে নওগাঁর মহাদেবপুর ক্লিনিক থেকে বাবা-মায়ের সম্মতিতে এই শিশুকে দত্তক আনেন তিনি। এজন্য তাকে ক্লিনিকের সিজার ও ওষুধের আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হয়েছে। এ ছাড়া ওই শিশুর আসল মায়ের সঙ্গে তিনি সবসময় যোগাযোগ রেখেছেন এবং ভালোমন্দ খোঁজ রেখেছেন।