পাঁচ মাসের কন্যাসন্তান আনাহিতা বুঝতেই পারল না মা সুইটি আলম সুরভী (২২) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এদিকে পরিবারের ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করেছে ৪ বছর আগে, আর গত রোববার সড়ক দুর্ঘটনায় বড় মেয়ের মৃত্যুর শোকে নির্বাক সুরভীর মা। বিকেলে সুরভীর লাশ অ্যাম্বুলেন্সে গোপালগঞ্জ শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণ ঘটে।
সুরভীকে নিয়ে ভোর ৬টায় ইমাদ পরিবহনের গাড়িতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাবা মাসুদ আলম। দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে মাসুদ বেঁচে গেলেও বাঁচেননি সুরভী। পড়ালেখা করার কারণে ২ মাস বয়স থেকে আনাহিতাকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সুরভী। বেসরকারি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।
দেড় বছর আগে রংপুরের রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুরভীর। রেজাউর ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এদিকে বর্তমানে মাসুদ আহতাবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধী রয়েছেন। মাসুদের গ্রামেরবাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরিগোপিনাথপুর গ্রামে হলেও দীর্ঘ বছর আগে শহরের পাচুড়িয়া এলাকার বাড়িতে থাকতেন।
অপরদিকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী আফসানা মিমি (২৬) গিয়েছিলেন সার্টিফিকেট আনতে। ইচ্ছা ছিল চাকরি করে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন কেড়ে নিল সড়ক দুর্ঘটনা। সার্টিফিকেট আনাই যেন কাল হলো তার। নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মিমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার থেকে এমএস করেছেন। রোববার সকালে মা কানিজ ফাতেমা ও ছোট বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপা গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে মিমিকে বাসে উঠিয়ে দেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার কথা ছিলো তার।
এ দুর্ঘটনায় গোপালগঞ্জের সুইটি আলম সুরভী, আফসানা মিমিসহ ৮ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার, বাসের সুপারভাইজার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস ও ড্রাইভার জাহিদ, সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের হেদায়েত মিয়া বাহার, বনগ্রামের মোস্তাক শেখ, ছুটফা গ্রামের সজিব শেখ, মুকসুদপুর উপজেলার আদম পুরের মাসুদ খান এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নিলফা গ্রামের রকিব শেখ। তাদের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম।