দামে অস্বস্তি থাকলেও আছে খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা

বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক।ছবি : সংগৃহীত

করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বিশ্বের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। বিশেষ করে যুদ্ধকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য ও জ্বালানির সরবরাহ সংকটে এক বছরের বেশি সময় ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। একই কারণে দৈনন্দিন অত্যাবশ্যক এসব দ্রব্যসামগ্রীর বৈশ্বিক উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাড়তি চাহিদার বিপরীতে সরবরাহজনিত বিশৃঙ্খলার প্রভাব ঠেকেছে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর। এর সঙ্গে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার মতো দেশে দেশে ডলার সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সব মিলিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম। এতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে আমদানিকারক দেশগুলো।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পূর্ভাবাসে চলতি বছরকে দুর্ভিক্ষের বছর হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন বিশ্বব্যাংক তাদের সব শেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে খাদ্যমূল্য নিয়ে বৈশ্বিক চিত্র এবং বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির ইস্যুতে দাবি করেছে, দাম নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা আছে বাংলাদেশে, যা চলমান বৈশ্বিক দুর্যোগের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত ‘ফুড সিকিউরিটি আপডেট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে দামে অস্বস্তি প্রসঙ্গে দাবি করা হয়, এতদিন বাংলাদেশের বাজারে আটা ও মোটা চালের দামে অস্বস্তি ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং উচ্চ পরিবহন খরচের কারণে এটা তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে গমের আটার দাম কমতে শুরু করেছে, কিন্তু আমদানিতে যথেষ্ট মন্দা দৃশ্যমান হয়েছে। অপরদিকে মৌসুমে চালের বাজারে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও মোটা চালে এখনো অস্থিরতা রয়ে গেছে। তবে বোরো মৌসুমে খাদ্য সংগ্রহ কর্মসূচির মাধ্যমে শস্যভান্ডার পুনরুদ্ধার চেষ্টা চলছে বলেও দাবি করা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।

এদিকে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ২০২২ সালের অক্টোবর এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির চিত্র তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু সংকট খাদ্য সংকটকে আরও তীব্র করেছে। এতে খাদ্য সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় সব নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালে খাদ্য সংকট দৃশ্যমান। এসব দেশে চাল ও গমের আটার দাম বেশি। সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ৯৪ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। ৮৬ শতাংশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর, এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ৮৭ দশমিক শূন্য শতাংশ দেশে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটের ঘরে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর প্রায় ৮৭ শতাংশ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। খাদ্য সরবরাহে এই ঘাটতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির দরুণ আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com