৫০ লাখ টাকার হদিস মেলেনি ৭ বছরেও

৫০ লাখ টাকার হদিস মেলেনি ৭ বছরেও
ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের গাড়ি থেকে ৭ বছর আগে ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ‘গায়েব’ হয়ে যাওয়ার ঘটনার মামলার বিচার শেষ হয়নি। মেলেনি টাকার হদিসও। শুরুতে মামলাটির তদন্ত করে পুলিশ। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিলেও টাকার রহস্যের সমাধান হয়নি। গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামি এখন জামিনে আছেন।

পুলিশ ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা রাজিবুর রহমানসহ পাঁচজনের দায়িত্ব ছিল ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে টাকা সংগ্রহ করা। তারা প্রথমে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর টাকা সংগ্রহের জন্য মাইক্রোবাস নিয়ে শহরের বাইরে সীতাকুণ্ডে যান। ব্যাংকের সীতাকুণ্ড শাখার নিচে মাইক্রোবাসে আর্মড গার্ড সদস্য আনজুর রহমানকে রেখে তারা উপরে যান। সেখান থেকে ৮১ লাখ টাকা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। রওনার কিছুক্ষণ পর ব্যাংক কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বুঝতে পারেন, গাড়িতে থাকা টাকার একটি বস্তা নেই। এরপর পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে টাকার একটি বস্তা হারিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

ওই ঘটনায় পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম সিডিএ করপোরেট শাখার তৎকালীন সহকারী মহাব্যবস্থাপক তৌফিকুর রহমান টাকা বহনে নিয়োজিত ব্যাংক কর্মকর্তা রাজিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ। ১১ মাস পর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবির। তিনি ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। হুমায়ুন বর্তমানে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত।

পাঁচ আসামি হলেন পূবালী ব্যাংক চট্টগ্রাম সিডিএ করপোরেট শাখার জুনিয়র অফিসার-ক্যাশ (সাময়িক বরখাস্ত) রাজিবুর রহমান, আর্মড গার্ড সদস্য (সাময়িক বরখাস্ত) আশিকুর রহমান, আনজুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম এবং গাড়িচালক বিজয় কুমার দাশ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পাঁচ আসামি পরস্পর যোগসাজশে পূবালী ব্যাংকের সাড়ে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার বাদী সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১৮ সাক্ষীর মধ্যে আরও ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি রয়েছে।

মামলায় দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু কালবেলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি মামলার বাদী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে মামলার সব আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। মামলাটি প্রথমে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ তদন্ত করেছে। যদিও মামলাটি দুদকের। তখন কিছুদিন মামলাটি থানা পুলিশের অধীনে ছিল। তখন টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এরপর মামলাটি আসে দুদকের কাছে। আসামিরা ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টাকা উদ্ধারের আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা মামলা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।’

জামিনে থাকা গাড়িচালক বিজয় কুমার দাশের আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আসামিদের ওই ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। যে পাঁচজনকে আসামি দেখানো হয়েছে, তারা ঘটনার পর এক সেকেন্ডের জন্যও পালিয়ে যাননি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ ছিল। পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে সেগুলো উদ্ধার করেনি। পরে এসে দুদক মামলাটি তদন্ত করছে। এটি তো দুদকের তদন্ত করার মতো মামলা নয়। তদন্তে আত্মসাতের ঘটনা দেখানো হয়েছে। এটি আত্মসাৎ নয়। দিনদুপুরে ডাকাতি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই টাকা গায়েব করার পেছনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো পক্ষ জড়িত আছে।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com