
বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদযাপিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস। দিনটি উপলক্ষে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, সারা দেশে শিশু সমাবেশ, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের ওপর আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ, প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, কেক কাটা, শোভাযাত্রা, পুরস্কার বিতরণ এবং দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়।
গতকাল সকাল থেকেই ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন এবং টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিসৌধে নামে মানুষের ঢল। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে জন্মদিন পালনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি।
জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে রাষ্ট্রপতি হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ। এ ছাড়া দেশের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এলে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও তার আশপাশের এলাকা।
দিনটি উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকালে আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া বাদ জুমা বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুরে ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনা সভা করে।
দিবসটি উপলক্ষে কাকরাইলে আলোচনা সভা করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে সুবজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অনাথলয়ে সুষম খাদ্য বিতরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক। পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারা দেশে বিজিবির সব ইউনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ‘অসমাপ্ত মহাকাব্য’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে জাতির পিতার ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সভাকক্ষে আলোচনা সভা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে টিএসসিতে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘মুজিব আমার পিতা’র উন্মুক্ত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
এতিম ও পথশিশুদের নিয়ে মেট্রোরেলে এবং ছাদখোলা বাসে আনন্দভ্রমণের আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ পরিদর্শন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।