পাবনা বেড়া উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহম্মদ জালাল উদ্দিন (বর্তমানে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৬ জন ডিলারের নামে ৭২টি ভুয়া ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৭০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় জেলা খাদ্য অফিসের তদন্তে সত্যতা মেলার পর খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ৩ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতসম্পন্ন অডিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি খুব শিগগির বেড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে অডিটে আসবেন।
জানা গেছে, বেড়ার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহম্মদ জালাল উদ্দিন ২০১৮-১৯, ২০২৯-২০ অর্থবছরে উপজেলার কৈটোলা গ্রামের ৩ খাদ্যবান্ধব ডিলার কেরামত আলী, বজলুল করিম, ফকরুল, মাসুমদিয়ার ইকবালসহ ১৬ ডিলারের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৭০ টাকা ট্রেজারি চালানে সোনালী ব্যাংকে জমা না করিয়ে অফিসে ভুয়া ট্রেজারি চালান সংরক্ষণ করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম হচ্ছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলাররা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি হেডে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার পর তার এক কপি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে জমা দিয়ে খাদ্যের ডিও নিতে হবে। তারপর সে ডিও মোতাবেক তারা খাদ্যগুদাম থেকে মাল উত্তোলন করবেন। এখানে তৎকালীন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সরকারি বিধান অমান্য করে ১৬ জন ডিলারকে তার কাছে ট্রেজারি চালানের টাকা জমা দিতে বলেন। তিনি নিজেই ট্রেজারি চালানের টাকা জমা দেবেন জানালে ডিলাররা তার কাছে টাকা জমা দেন। এরপর খাদ্য নিয়ন্ত্রক ডিলারদের দেয়া ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৭০ টাকা সোনালী ব্যাংকে ট্রেজারি চালানে জমা না দিয়ে ৭২টি ভুয়া ট্রেজারি চালান বানিয়ে অফিসে সংরক্ষণ করেন। এরপর তিনি গোদাগাড়ি উপজেলায় বদলি হয়ে যান এবং সম্প্রতি পাবনা ফরিদপুর উপজেলায় বদলি হয়ে আসেন।
বেড়া উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক পদে মো. কাওছারুল আলম যোগদান করেন। তিনি অফিসের চালান চেক করতে গিয়ে একটি চালান ভুয়া মনে হলে সোনালী ব্যাংকে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের ট্রেজারি চালানের তথ্য যাচাই করতে পাঠান। যাচাইয়ের পর অফিসে সংররিক্ষত ৭২টি চালান ভুয়া প্রমাণিত হয়। এ ঘটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার কৈটোলার ডিলার কেরামত আলী, মাসুমদিয়ার ডিলার ফকরুল ও হাটুরিয়া-নাকালিয়ার ডিলার ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তৎকালীন খাদ্যনিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন ট্রেজারি চালানের কথা বলে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়েছেন। সে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে কি না তা তাদের জানা নেই বলে জানান।
বর্তমান খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কাওছারুল আলম জানান, তিনি টাকা আত্মসাতের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। এখন নিরীক্ষা দল ঢাকা থেকে আসার পর সবকিছু বোঝা যাবে।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সবুর আলী জানান, বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় উপজেলা খাদ্য কমিটির মিটিংতে রেজ্যুলেশন করে জেলা প্রশাসককের কার্যালয়ে পাঠান। তিনি টাকা আত্মসাতের ঘটনা সত্য বলে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান। এ ঘটনায় ডিসি ফুড মো. তানভীর রহমানের নেতৃত্বে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল হক ও একজন টেকনিকেল ফুড ইন্সপেক্টর তদন্ত করতে বেড়ায় আসেন।
এ ব্যাপারে ডিসি ফুড মো. তানভীর রহমান জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন খাদ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে ৩ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চতর অডিট কমিটি বেড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে পাঠাচ্ছে। তাদের নিরীক্ষার পর টাকা আত্মসাৎকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বেড়ার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহম্মদ জামাল উদ্দিনের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।