বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরে এজন্য ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রেলপথ নির্মাণে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ৯৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলে শুরু হবে রেলপথের নির্মাণকাজ।
বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর শহীদ এম মনসুর আলী রেলস্টেশন পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বগুড়া অংশে প্রায় ৪৮০ এবং সিরাজগঞ্জে ৪৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। চলতি অর্থবছরে জমি অধিগ্রহণে ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ এবং ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল বগুড়ায় অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই জেলাকে রেলপথ উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে যাত্রী ও কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। এতে সময় লাগে ৩-৪ ঘণ্টা। এরপর প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঢাকা পৌঁছতে লাগে ৮-৯ ঘণ্টা। আর বাসে সড়কপথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা যেতে লাগে ৫-৬ ঘণ্টা।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সরাসরি ট্রেনযোগে পৌঁছতে লাগবে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। ফলে ঢাকা যেতে লাগবে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেলসেবা চালু হলে উত্তরের জেলার ট্রেন যাত্রীদের ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সেইসঙ্গে কমবে খরচ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর একটি-বগুড়া স্টেশন থেকে ২ হাজার ৬০০ ফুট পশ্চিমে অবস্থিত শহরের রানীরহাট রেললাইন পর্যন্ত। এরপর বগুড়া রেললাইন থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার। অন্যটি হলো বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ। এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে তিনটি জংশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার কাহালু, বগুড়া সদর রেলওয়ে স্টেশন ও শাহজাহানপুরের রানীরহাটে জংশন করা হবে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজি জানান, ২০১৭ সালে ভারতের তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, এ রেলপথ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে অধিগ্রহণ করা জমির প্রতিটি মৌজায় সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হবে। সরকারি মূল্য অনুযায়ী জমির মালিকদের অর্থ পরে দেওয়া হবে। এই রেলপথ নির্মাণ হলে উত্তরের ১০ জেলার অর্থনীতির গতি বাড়বে।